সালাফী কি ? সালাফী কে ?আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী What is Salafi? Who are the Salafis? Ahle Hadith means followers of Hadith
সালাফিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
সালাফি আন্দোলন (আরবি: سلفية) সুন্নি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন। এটি সালাফিবাদ নামেও পরিচিত।
সালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ পূর্বপুরুষ। আর ব্যবহারিক অর্থ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষগণ। অর্থাৎ সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ, যাঁদের ব্যাপারে রাসূল (স) বলে গিয়েছেন, তাঁরা হলেন উম্মাতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মাত। আর সালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের প্রথম তিন যুগের মানুষ ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাঁদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফিবাদ বলা হয়।
এই আন্দোলনে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের বিশেষ অবদান আছে। তিনিও একজন সালাফি পণ্ডিত ছিলেন। সালাফিরা মাজার কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের বিরোধীতা করে। সালাফিবাদ ইসলামের আক্ষরিক, কঠোর ও বিশুদ্ধ চর্চা এবং বিশেষত সালাফ তথা ইসলামের প্রথম যুগের চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সালাফিবাদ অন্যতম প্রভাবশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল মতাদর্শ।[১][২][৩][৪] বিশ্বে মুসলিমরা যে দুইটি প্রধান মতবাদের অনুসরণ করে, তার একটি হলো সুফিবাদ, আরেকটি হলো সালাফিবাদ। সালাফিবাদ সুফিবাদের বিরোধিতা করে। অধিকাংশ সালাফী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। আবার তাদের অনেকে নির্দিষ্ট কোন মাযহাব এর অনুসরণ করে না।সালাফিরা হাম্বলী মাযহাবকে তুলনামূলক বেশি অনুসরণ করলেও কখনো নির্দিষ্ট একটি মাযহাবের উপর আঁকড়ে ধরে থাকে না, আবার কোনো মাযহাবকে ফেলেও দেয় না। সালাফিবাদে হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, হাম্বলী এই চার মাযহাবকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
ইসলামের দ্বিতীয় শতাব্দীতে গড়ে উঠা আহলুল হাদিস আন্দোলন সালাফি আন্দোলনের সাথে একই সূত্রে গাঁথা। শারয়ী বিষয়ে সালাফিদের সাথে অন্যান্য মতালম্বি মুসলিমদের মতপার্থক্য রয়েছে। তারা কিছুসংখ্যক বিশেষ দিন এবং বিষয় যেমন, শবে বরাত, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী, গুরুজনের পায়ে চুম্বন/সালাম করা ইত্যাদি ইসলামে যোগ হওয়া নতুন জিনিস হিসেবে বিশ্বাস করে এবং এগুলো উৎযাপন করে না।
২০১৫ সালে মিশরে মিশরীয় সরকার সালাফিদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[৫]
--------------------------------------------
قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي
وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
‘বলুন! ইহাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে, জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)।
‘আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী’। পারিভাষিক অর্থে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী’। সকল দিক ছেড়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়ার আন্দোলনকেই বলা হয় ‘আহলেহাদীছ আনেদালন’। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম ও সালাফে ছালেহীন সর্বদা এ পথেরই দাওয়াত দিয়ে গেছেন। ‘আহলেহাদীছ’ তাই প্রচলিত অর্থে কোন ফের্কা বা মতবাদের নাম নয়, এটি একটি পথের নাম। এ পথ আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র পথ। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথ। এ পথের শেষ ঠিকানা হ’ল জান্নাত। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের যাবতীয় হেদায়াত এ পথেই মওজুদ রয়েছে। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সেই জান্নাতী পথেই মানুষকে আহবান জানায়। এ আন্দোলন তাই মুমিনের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র আন্দোলন।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধন আহলেহাদীছ আন্দোলনের সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য।
পাঁচটি মূলনীতি :
১. কিতাব ও সুন্নাতের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা :
এর অর্থ- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত আদেশ-নিষেধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তাকে নিঃশর্তভাবে ও বিনা দ্বিধায় কবুল করে নেওয়া ও সেই অনুযায়ী আমল করা।
২. তাক্বলীদে শাখ্ছী বা অন্ধ ব্যক্তিপূজার অপনোদন :
‘তাক্বলীদ’ অর্থ- শারঈ বিষয়ে বিনা দলীলে কারো কোন কথা চোখ বুঁজে মেনে নেওয়া। ‘তাক্বলীদ’ দু’ প্রকারের : জাতীয় ও বিজাতীয়। জাতীয় তাক্বলীদ বলতে ধর্মের নামে মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীক্বার অন্ধ অনুসরণ বুঝায়। বিজাতীয় তাক্বলীদ বলতে- বৈষয়িক ব্যাপারের নামে সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রভৃতি বিজাতীয় মতবাদের অন্ধ অনুসরণ বুঝায়।
৩. ইজতিহাদ বা শরী‘আত গবেষণার দুয়ার উন্মুক্ত করণ :
‘ইজতিহাদ’ অর্থ : যুগ-জিজ্ঞাসার জওয়াব পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ হ’তে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। এই অধিকার ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের সকল মুত্তাক্বী ও যোগ্য আলিমের জন্য খোলা রাখা।
৪. সকল সমস্যায় ইসলামকেই একমাত্র সমাধান হিসাবে পরিগ্রহণ :
এর অর্থ- ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের সকল সমস্যায় ইসলামকেই একমাত্র সমাধান হিসাবে গ্রহণ করা।
৫. মুসলিম সংহতি দৃঢ়করণ :
এর অর্থ- কুরআন ও সুন্নাহর আদেশ-নিষেধকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
উপরোক্ত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ চায় এমন একটি ইসলামী সমাজ, যেখানে থাকবেনা প্রগতির নামে কোন বিজাতীয় মতবাদ; থাকবে না ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ।
কর্মসূচী :
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর চার দফা কর্মসূচী হ’ল- তাবলীগ, তানযীম, তারবিয়াত ও তাজদীদে মিল্লাত । অর্থাৎ প্রচার, সংগঠন, প্রশিক্ষণ ও সমাজ সংস্কার। এর মধ্যে সমাজ সংস্কারই হ’ল মুখ্য।
======================
আহলেহাদীস একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম :(১ম পর্ব)
--------------------------
ভূমিকা : সাহায্যপ্রাপ্ত দল, নাজাতপ্রাপ্ত ফিরক্বা এবং হক্বের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘আহলেহাদীছ’। এরা ঐ সমস্ত মহান ব্যক্তি, যারা সর্বযুগে ছিলেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى مَنْصُورِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُوْمَ السَّاعَةُ ‘আমার উম্মতের মধ্যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল (আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হ’তে) সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হ’তে থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[1]
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন, إن لم تكن هذه الطائفة المنصورة أصحاب الحديث، فلا أدري من هم ‘সাহায্যপ্রাপ্ত এই দলটি যদি আছহাবুল হাদীছ (আহলেহাদীছ) না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা’?[2]
ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, ‘ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) এই হাদীছের ব্যাখ্যায় অত্যন্ত চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সাহায্যপ্রাপ্ত দলটি হচ্ছে আছহাবে হাদীছের দল। আহলেহাদীছের চাইতে কারা এ হাদীছের আওতাভুক্ত হওয়ার অধিক হক্বদার হ’তে পারেন? যারা (আহলেহাদীছগণ) সৎ মানুষদের পথে চলেন, সালাফে ছালেহীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের দ্বারা বিরুদ্ধবাদীদের এবং বিদ‘আতীদের সামনে বুক ফুলিয়ে জবাব প্রদানের মাধ্যমে তাদের যবান বন্ধ করে দেন। যারা আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার জীবনকে ত্যাগ করে বিশুষ্ক মরুভূমি এবং তৃণ-লতা ও পত্রহীন এলাকায় (হাদীছ সংগ্রহের জন্য) সফর করাকে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। তারা আহলে ইলম এবং আহলে আখবারের সংস্পর্শে আসার জন্য ভ্রমণের কঠিন পরিস্থিতিকেও শোভনীয় মনে করেন।[3]
ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদিনী (রহঃ) বলেছেন, هم أصحاب الحديث ‘তারা হচ্ছে আছহাবুল হাদীছ’। অর্থাৎ ‘সাহায্যপ্রাপ্ত দল’ দ্বারা আহলেহাদীছগণ উদ্দেশ্য।[4]
হাদীছ জগতের সম্রাট ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ সম্পর্কে বলেন, هم أهل الحديث ‘তারা হ’লেন আহলেহাদীছ’।[5]
ইমাম ইবনে হিববান উপরোক্ত হাদীছের উপর এই মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন যে,ذِكْرُ إِثْبَاتِ النُّصْرَةِ لِأَصْحَابِ الْحَدِيثِ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ ‘ক্বিয়ামত অবধি আল্লাহ কর্তৃক আহলেহাদীছদের সাহায্যপ্রাপ্তি প্রমাণিত হওয়ার বিবরণ’।[6]
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন মুফলিহ আল-মাক্বদেসী বলেন, أَهْلُ الْحَدِيثِ هُمْ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ الْقَائِمُونَ عَلَى الْحَقِّ ‘আহলেহাদীছরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল। যারা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন’।[7]
ইমাম হাফছ বিন গিয়াছ এবং ইমাম আবুবকর বিন আইয়াশ (রহঃ)-এর বক্তব্যকে সমর্থন ও সত্যায়ন করতঃ ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, তারা দু’জন সত্যই বলেছেন যে, আহলেহাদীছগণ সৎ মানুষ। আর এমনটা কেনইবা হবেন না, তারা তো (কুরআন ও হাদীছের (মুকাবিলায়) দুনিয়াকে সম্পূর্ণরূপে তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করেছেন।[8]
প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَوْلَى النَّاسِ بِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً ‘ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ব্যক্তি আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে, যারা সবচেয়ে বেশী আমার উপরে দরূদ পাঠ করে’।[9] এজন্যই আহলেহাদীছ পরিবারের ছোট ছোট বালক-বালিকাদের অন্তরে হাদীছের প্রতি গভীর অনুরাগ ও আকর্ষণ বিরাজিত। আর আহলেহাদীছগণ ক্বিয়াসী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ফিক্বহী মাসআলার খুঁটিনাটি বিষয়ের পরিবর্তে কেবলমাত্র নবী করীম (ছাঃ)-এর হাদীছ বর্ণনাকেই পরকালে সৌভাগ্যবান হওয়ার মাধ্যম মনে করেন। তাই ইমাম আবূ হাতেম ইবনে হিববান আল-বাসতী (রহঃ) উপরোক্ত হাদীছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উদ্ভাবন করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামত দিবসে আহলেহাদীছগণের রাসূল (ছাঃ)-এর সর্বাধিক নিকটে থাকার দলীল উক্ত হাদীছে বিদ্যমান। কেননা এই উম্মতের মধ্যে আহলেহাদীছদের চাইতে কোন দল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর বেশী দরূদ পাঠ করে না।[10]
এত ফযীলত ও মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্তেবও কতিপয় ব্যক্তি আহলেহাদীছদের বিরোধিতা করা, তাদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ, উপহাস-পরিহাস এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাকে নিজেদের পৈত্রিক অধিকার মনে করে। সম্ভবত এই সকল আহলেহাদীছ বিরোধীদের উদ্দেশ্য করেই ইমাম আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসিত্বী (রহঃ) মন্তব্য করেছেন, لَيْسَ فِى الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ إِلاَّ وَ هُوَ يَبْغَضُ أَهْلَ الْحَدِيْثِ- ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদ‘আতী নেই, যে আহলেহাদীছদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে না’।[11]
ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, ‘আমি সর্বত্র যত বিদ‘আতী এবং নাস্তিকমনা মানুষ পেয়েছি, তারা সকলেই ‘ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ তথা আহলেহাদীছদেরকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখত এবং আহলেহাদীছদেরকে নিকৃষ্টভাবে সম্বোধন করত (যেমন হাশাবিয়া)।[12]
অথচ আমরা তাদেরকে বুঝাতে চাই যে, أهل الحديث همُو أهل النبي وإن لم يصحبوا نفسه أنفاسه صحبوا ‘আহলেহাদীছগণই মূলত আহলে নবী বা নবী (ছাঃ)-এর পরিবার। যদিও তারা সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেননি। তথাপি তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সুগন্ধীযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নির্গত অমর বাণী দ্বারা উপকৃত হয়েই আসছেন’।
আলোচ্য গ্রন্থটি শায়খ হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ রচিত একটি চমৎকার গ্রন্থ। এতে বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘আহলেহাদীছ’-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় প্রশ্ন, আপত্তি ও সমালোচনার জবাব প্রদান করা হয়েছে। দলীল-প্রমাণাদি উপস্থাপনের দৃষ্টিকোণ হ’তে এটি একটি সারগর্ভ ও অনন্য পুস্তক।*
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম এবং এর পরিচিতি :
মুসলমানদের অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। যেমন মুমিন, ইবাদুল্লাহ (আল্লাহ্র বান্দা), হিযবুল্লাহ (আল্লাহ্র দল)। তদ্রূপ ছাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুহাজির, আনছার ইত্যাদি নামসমূহ। ঠিক তেমনিভাবে ঐসকল গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে ‘আহলেহাদীছ’ ও ‘আহলে সুন্নাত’ উপাধিদ্বয় ‘খায়রুল কুরূন’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ হ’তে সাব্যস্ত রয়েছে। মুসলমানদের মাঝে উভয় গুণবাচক উপাধির ব্যবহার নির্দ্বিধায় প্রচলিত আছে। বরং এর বৈধতার পক্ষে মুসলিম উম্মাহ্র ইজমা রয়েছে।
==============================
==============================
অনেকে মনে করে হানাফি মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে শাফেয়ী মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে মালেকী মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে হাম্বলি মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে ধুত্তুরি কিচ্ছু বুঝিনা,সুতরাং নিজের মত চলাই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আহলে হাদিস/সালাফি মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে তাবলীগ জামাত মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে হেফাজতে ইসলাম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে চরমনাই পীর মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে জামাতি ইসলাম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আটরশির পীর মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে ছারছিনা তরীকা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে দেওয়ানবাগী মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে দেউবন্দি আলেম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে বেরলভি আলেম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে মাইজভাণ্ডারী মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে অমুক অলি মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে লেংটা বাবা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে অলৌকিক কিছু দেখানো মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার মসজিদের হুজুর মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার বুড়া পাকা দারিওয়ালা নানা/দাদা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার বাপ যা বলে সেইটাই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার মা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার সংসার মানেই ইসলাম !
::: সব সমস্যার মূল একটি জায়গায় আর সেটা হচ্ছে নিজের ধর্মগ্রন্থটা নিজে একবার অন্তত (নিজের মাতৃভাষায়) না পড়া। দুনিয়ার বিষয়ে কোন কাজ করার সময় বার বার যাচাই করে কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে বাপ দাদা, বুজুর্গি, হুজুর, আলেম, পীর, নেতা, মা, কি বলে সেইটাই মানুষের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। ইন্টারনেটে অথবা সমাজে একজন মুসলিম অন্য মুসলিম এর সাথে তর্ক না করে আর এত দলাদলি না করে শুধু একটা কাজ করলেই শব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, আর সেটা হচ্ছে কুরআন এর অনুবাদ নিজে পড়া এবং সহিহ হাদিসগুলা পড়া ও বুঝার চেষ্টা কর এবং কুরআন ও সহিহ হাদিসের রেফারেন্স সহকারে আলেমগনের কথা গ্রহণ করা।
------------------------------
লেখক :মোহাম্মদ আবু হানিফ
ahanif520@gmail.com
=============================
=============================
সালাফী কি ? সালাফী কে ?
সালাফী কি ? সালাফী কে ? ✔সালাফী কিঃ- সালাফী শব্দ এসেছে সালাফে সলেহীন থেকে। সাহাবা থেকে শুরু করে তাবে-তাবেঈন পর্যন্ত যারা ছিল ।(৩ মুসলিম জেনারেশন )যারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ উম্মত তাদেরকে বা তাদের ঐ সময়কাল কে সালাফে সলেহীন বলে।অর্থাৎ যারা কোরআন ও সহী হাদীস সরাসরি মেনে চলে সাহাবা থেকে তাবে-তাবেঈনদের মত করে তাদেরকে সালাফী বলে।এর পর ৪০০ বছর পর থেকে মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ✔সালাফী কারা? সালাফী তারা যারা অন্ধঅনুসরন করে না। সালাফীরাই মুলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। অধিকাংশ সালাফীরা দাঈ।(ইসলামের দাওয়াত দেই যারা তাদের দাঈ বলে)সালাফী নতুন কোন মাযহাব না বা কোন রাজনৈতিক দল না। ✔সালাফীদের দাওয়াত? সালাফীরা সাধারণত তাওহীদ, ও তাযকিয়াহ (আল ইমরান ১৬৪)এর দাওয়াত দিয়ে থাকে। ✔সালাফীদের দাওয়াতের লক্ষ্যঃ- ১।একমাএ অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ। ২।সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহী হাদীস অনুসারে করতে হবে। ৩। কোরআন ও সহী হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। ৪।সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে বা ইজমাই না থাকলে সে সকল বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ (শরীয়ত গবেষণা) করবেন,কোরআন বা সহী হাদীস বিরোধী ইজতিহাদ হলে চলবে না। ৫।কোনভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে দলিল ছাড়া কারো উক্তির অনুসরন করা চলবে না। ✔সালাফীদের বৈশিষ্ট্যঃ- ১।তাদের নিকট কোন কিছু পেশ করলে আগে তারা তার যাচাই করে সহী নাকি যয়িফ না জাল হাদীস। ২।সব কিছুর উর্ধ্বে আল্লাহ ও তার রাসুল। ৩।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ শেষ নাবী ও রাসুল মানা কে ইমানের অন্যতম শর্ত । ৪।রাসু্লুল্লাহ সাঃ নুরের তৈরী নন আমাদের মত মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ট মানুষ ও নাবী সাঃ। ৫।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ ছাড়া ভুলের উর্ধ্বে কেউ নয়। ৬।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ এর ৪ খলিফাকে খুলাফায়ে রাশেদীন বলে বিশ্বাস করা। ৭।আল্লাহ নিরাকর নয় ও আরশে সমুন্নত ৮।যতবড় জ্ঞানী বা শক্তিশালী ব্যাক্তি হোক না কেন কোরআন ও সহী হাদীসের বিপরীত হলে তার কথা মানে না আর কোরআন ও সহী হাদীসের পক্ষে হলে গোলামের মত মানে। ৯।ইমান বাড়ে ও কমে বলে বিশ্বাস করে। ১০।আবু হানীফা (রহ),ইমাম মালেক (রহ),ইমাম শাফেয়ী (রহ),ইমাম আহমাদ (রহ) ৪ ইমাম কে আমরা শ্রদ্ধা করি। ১১।কারও তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরন করে না। ১২।শুধু কুতবে সিত্তাহই আমলের জন্য অধিক গুরুত্ব মানে ।অন্যান্য কিতাবের সাহী ও হাছান হাদিস ও গ্রহন যোগ্য & আমল যোগ্য হিসাবে গ্রহন করে। ১৩।ইলমে গায়েবের কথা একমাএ আল্লাহ জানে। ১৪।মির্জা আহমেদ কাদিয়ানী কে অমুসলিম মানে। ১৫।এক সাথে ৩ তালাক দিলে এক তালাক গন্য হবে। ✔সালাফী সম্পর্কে ভুল ধারনাঃ- ১।অনেকে মনে করে এরা সালাফী ও শাফেয়ীরা এক মত ২।অনেকে মনে করে সালাফীরা মাযহাব মানে না মানে লা মাযহাব (নেই মাযহাব)হ্যাঁ সালাফীরা বানোয়াট মাযহাব মানে না ।কারন ৪ ইমাম কখনই বলেননি তোমরা আমাদের অনুসরন করো কিন্তু তারা বলে গেছে নবী সাঃ কে অনুসরন করতে।আর মাযহাব মানার কোন আদেশ পবিএ কোরআন ও সহী হাদীসে নাই। ৩।অনেকে মনে করে মুহাম্মদ বিন আঃ ওহাবের শির্ক ও বিদআতের বিরুদ্ধে আন্দোলন।আর সালাফী এর মতবাদ আজ থেকে ২০০ শত বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। ✔সালাফীরা কি লা মাযহাব? সালাফীরা মুসলিম।সালাফীরা ১০০% হানাফী,১০০% শাফেঈ,১০০%মালেকী,১০০% হাম্বলী। সালাফীদের ভয়ঃ- সালাফীরা শিরিক ,বিদয়াত ও ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ গুলোকে ভয় পায়,আর দুর্বল ও যয়িফ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে ভয় পায়। ✔সালাফীদের অন্যতম বৈশিষ্টঃ- অধিকাংশ সালাফীরা ওয়াজ মাহফিলে বা কিছু বলতে গেলে কোরআন ও সহী হাদিসের দলিল সহকারে বলে থাকে।কোন সুরা কোন আয়াত কত নং হাদীস সহকারে বলে। ✔সালাফিদের লক্ষ উদ্দেশ্য: সালাফিরা এমন এক রাস্ট্র চায় যেখানে থাকবে না ইসলামের নামে কোন দল/গোড়ামাজহাবী মতবাদ & থাকবে না প্রগতীর নামে পশ্চিমা/ ইহুদি কালচার /মতবাদ,থাকবে না ইসলামের নামে গনতন্ত্র/জংজ্ঞীবাদ,দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের ঈমান ও আমলের পরিশুদ্ধতা এনে প্রয়োজনে ইমামের নেতৃত্বে জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাস্ট্র গঠন করে একমাত্র কুরান & সাহী সুন্নার আলোকে দেশ পরিচালীত হবে। মুসলীম নাম থাকার পর ও কেন সালাফি/আহালে হাদিস/আহালে সুন্নাহ পরিচয়ের প্রয়োজন হল: এই প্রসংজ্ঞে উত্তর দিচ্ছেন সৌদি আরবের উচ্চ উলামাদের অন্য তম : ফাজিলাতুশ শাইখ রামাদান আল হুজুরী(হাফি:) Watch "Why One Should Call Himself Salafee or Ahlul Hadeeth by Shaykh Ramzaaan al-Haajiree" on YouTube -
https://www.youtube.com/c…/UCdKbDqIqx9PEsEV3AJ8YBTA/featured
সালাফীরা অধিকাংশ লোক দাঈ (ইসলামের দাওয়াত দেই যারা তাদের দাঈ বলে,আরব দেশে সালাফি, ভারত উপমহাদেশে আহালুল হাদিস,আফ্রিকা মহাদেশে আনসারুস সুন্নাহ নামে হিসাবে পরিচিত। আহালুল হাদিস সম্পকে কাবা শরীফের ইমামের বক্তব্য কি? Watch "Ahle Hadees Hi Firqa Najia Hai By Imam E Kaba Shaikh Khalid Al Ghamdi Hafizahullah" on YouTube - https://youtu.be/FbKsbCtEKjs
------------------------------
লেখক :মোহাম্মদ আবু হানিফ
ahanif520@gmail.com
www.facebook.com/ahanif520