Showing posts with label Islam. Show all posts
Showing posts with label Islam. Show all posts

Thursday, April 14, 2022

সালাফী কি ? সালাফী কে ?আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী !  What is Salafi? Who are the Salafis? Ahle Hadith means followers of Hadith

সালাফী কি ? সালাফী কে ?আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী ! What is Salafi? Who are the Salafis? Ahle Hadith means followers of Hadith

 সালাফী কি ? সালাফী কে ?আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী What is Salafi? Who are the Salafis? Ahle Hadith means followers of Hadith




সালাফিদের সংক্ষিপ্ত  পরিচিতিঃ


সালাফি আন্দোলন (আরবিسلفية‎‎) সুন্নি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন। এটি সালাফিবাদ নামেও পরিচিত।

সালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ পূর্বপুরুষ। আর ব্যবহারিক অর্থ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষগণ। অর্থাৎ সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ, যাঁদের ব্যাপারে রাসূল (স) বলে গিয়েছেন, তাঁরা হলেন উম্মাতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মাত। আর সালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের প্রথম তিন যুগের মানুষ ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাঁদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফিবাদ বলা হয়।

এই আন্দোলনে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের বিশেষ অবদান আছে। তিনিও একজন সালাফি পণ্ডিত ছিলেন। সালাফিরা মাজার কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের বিরোধীতা করে। সালাফিবাদ ইসলামের আক্ষরিক, কঠোর ও বিশুদ্ধ চর্চা এবং বিশেষত সালাফ তথা ইসলামের প্রথম যুগের চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সালাফিবাদ অন্যতম প্রভাবশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল মতাদর্শ।[১][২][৩][৪] বিশ্বে মুসলিমরা যে দুইটি প্রধান মতবাদের অনুসরণ করে, তার একটি হলো সুফিবাদ, আরেকটি হলো সালাফিবাদ। সালাফিবাদ সুফিবাদের বিরোধিতা করে। অধিকাংশ সালাফী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। আবার তাদের অনেকে নির্দিষ্ট কোন মাযহাব এর অনুসরণ করে না।সালাফিরা হাম্বলী মাযহাবকে তুলনামূলক বেশি অনুসরণ করলেও কখনো নির্দিষ্ট একটি মাযহাবের উপর আঁকড়ে ধরে থাকে না, আবার কোনো মাযহাবকে ফেলেও দেয় না। সালাফিবাদে হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, হাম্বলী এই চার মাযহাবকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।

ইসলামের দ্বিতীয় শতাব্দীতে গড়ে উঠা আহলুল হাদিস আন্দোলন সালাফি আন্দোলনের সাথে একই সূত্রে গাঁথা। শারয়ী বিষয়ে সালাফিদের সাথে অন্যান্য মতালম্বি মুসলিমদের মতপার্থক্য রয়েছে। তারা কিছুসংখ্যক বিশেষ দিন এবং বিষয় যেমন, শবে বরাতপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীগুরুজনের পায়ে চুম্বন/সালাম করা ইত্যাদি ইসলামে যোগ হওয়া নতুন জিনিস হিসেবে বিশ্বাস করে এবং এগুলো উৎযাপন করে না।

২০১৫ সালে মিশরে মিশরীয় সরকার সালাফিদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[৫]


আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী’।
--------------------------------------------
قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْا إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي
وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
‘বলুন! ইহাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে, জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)।
‘আহলেহাদীছ’ অর্থ ‘হাদীছের অনুসারী’। পারিভাষিক অর্থে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী’। সকল দিক ছেড়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়ার আন্দোলনকেই বলা হয় ‘আহলেহাদীছ আনেদালন’। ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম ও সালাফে ছালেহীন সর্বদা এ পথেরই দাওয়াত দিয়ে গেছেন। ‘আহলেহাদীছ’ তাই প্রচলিত অর্থে কোন ফের্কা বা মতবাদের নাম নয়, এটি একটি পথের নাম। এ পথ আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র পথ। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথ। এ পথের শেষ ঠিকানা হ’ল জান্নাত। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের যাবতীয় হেদায়াত এ পথেই মওজুদ রয়েছে। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সেই জান্নাতী পথেই মানুষকে আহবান জানায়। এ আন্দোলন তাই মুমিনের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র আন্দোলন।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
নির্ভেজাল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে কিতাব ও সুন্নাতের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধন আহলেহাদীছ আন্দোলনের সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য।
পাঁচটি মূলনীতি :
১. কিতাব ও সুন্নাতের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা :
এর অর্থ- পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত আদেশ-নিষেধকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং তাকে নিঃশর্তভাবে ও বিনা দ্বিধায় কবুল করে নেওয়া ও সেই অনুযায়ী আমল করা।
২. তাক্বলীদে শাখ্ছী বা অন্ধ ব্যক্তিপূজার অপনোদন :
‘তাক্বলীদ’ অর্থ- শারঈ বিষয়ে বিনা দলীলে কারো কোন কথা চোখ বুঁজে মেনে নেওয়া। ‘তাক্বলীদ’ দু’ প্রকারের : জাতীয় ও বিজাতীয়। জাতীয় তাক্বলীদ বলতে ধর্মের নামে মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন মাযহাব ও তরীক্বার অন্ধ অনুসরণ বুঝায়। বিজাতীয় তাক্বলীদ বলতে- বৈষয়িক ব্যাপারের নামে সমাজে প্রচলিত পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রভৃতি বিজাতীয় মতবাদের অন্ধ অনুসরণ বুঝায়।
৩. ইজতিহাদ বা শরী‘আত গবেষণার দুয়ার উন্মুক্ত করণ :
‘ইজতিহাদ’ অর্থ : যুগ-জিজ্ঞাসার জওয়াব পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ হ’তে বের করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। এই অধিকার ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের সকল মুত্তাক্বী ও যোগ্য আলিমের জন্য খোলা রাখা।
৪. সকল সমস্যায় ইসলামকেই একমাত্র সমাধান হিসাবে পরিগ্রহণ :
এর অর্থ- ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনের সকল সমস্যায় ইসলামকেই একমাত্র সমাধান হিসাবে গ্রহণ করা।
৫. মুসলিম সংহতি দৃঢ়করণ :
এর অর্থ- কুরআন ও সুন্নাহর আদেশ-নিষেধকে নিঃশর্তভাবে মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা এবং মুসলিম উম্মাহর সার্বিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
উপরোক্ত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ চায় এমন একটি ইসলামী সমাজ, যেখানে থাকবেনা প্রগতির নামে কোন বিজাতীয় মতবাদ; থাকবে না ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ।
কর্মসূচী :
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর চার দফা কর্মসূচী হ’ল- তাবলীগ, তানযীম, তারবিয়াত ও তাজদীদে মিল্লাত । অর্থাৎ প্রচার, সংগঠন, প্রশিক্ষণ ও সমাজ সংস্কার। এর মধ্যে সমাজ সংস্কারই হ’ল মুখ্য।
======================
আহলেহাদীস একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম :(১ম পর্ব)
--------------------------
ভূমিকা : সাহায্যপ্রাপ্ত দল, নাজাতপ্রাপ্ত ফিরক্বা এবং হক্বের অনুসারীদের বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘আহলেহাদীছ’। এরা ঐ সমস্ত মহান ব্যক্তি, যারা সর্বযুগে ছিলেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى مَنْصُورِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُوْمَ السَّاعَةُ  ‘আমার উম্মতের মধ্যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল (আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হ’তে) সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হ’তে থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[1]

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন, إن لم تكن هذه الطائفة المنصورة أصحاب الحديث، فلا أدري من هم  ‘সাহায্যপ্রাপ্ত এই দলটি যদি আছহাবুল হাদীছ (আহলেহাদীছ) না হয়, তবে আমি জানি না তারা কারা’?[2]

ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, ‘ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) এই হাদীছের ব্যাখ্যায় অত্যন্ত চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সাহায্যপ্রাপ্ত দলটি হচ্ছে আছহাবে হাদীছের দল। আহলেহাদীছের চাইতে কারা এ হাদীছের আওতাভুক্ত হওয়ার অধিক হক্বদার হ’তে পারেন? যারা (আহলেহাদীছগণ) সৎ মানুষদের পথে চলেন, সালাফে ছালেহীনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের দ্বারা বিরুদ্ধবাদীদের এবং বিদ‘আতীদের সামনে বুক ফুলিয়ে জবাব প্রদানের মাধ্যমে তাদের যবান বন্ধ করে দেন। যারা আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতার জীবনকে ত্যাগ করে বিশুষ্ক মরুভূমি এবং তৃণ-লতা ও পত্রহীন এলাকায় (হাদীছ সংগ্রহের জন্য) সফর করাকে অগ্রাধিকার প্রদান করেন। তারা আহলে ইলম এবং আহলে আখবারের সংস্পর্শে আসার জন্য ভ্রমণের কঠিন পরিস্থিতিকেও শোভনীয় মনে করেন।[3]

ইমাম বুখারী (রহঃ)-এর উস্তাদ ইমাম আলী ইবনুল মাদিনী (রহঃ) বলেছেন,   هم أصحاب الحديث  ‘তারা হচ্ছে আছহাবুল হাদীছ’। অর্থাৎ ‘সাহায্যপ্রাপ্ত দল’ দ্বারা আহলেহাদীছগণ উদ্দেশ্য।[4]

হাদীছ জগতের সম্রাট ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ সম্পর্কে বলেন, هم أهل الحديث  ‘তারা হ’লেন আহলেহাদীছ’।[5]

ইমাম ইবনে হিববান উপরোক্ত হাদীছের উপর এই মর্মে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন যে,ذِكْرُ إِثْبَاتِ النُّصْرَةِ لِأَصْحَابِ الْحَدِيثِ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ  ‘ক্বিয়ামত অবধি আল্লাহ কর্তৃক আহলেহাদীছদের সাহায্যপ্রাপ্তি প্রমাণিত হওয়ার বিবরণ’।[6]

ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন মুফলিহ আল-মাক্বদেসী বলেন, أَهْلُ الْحَدِيثِ هُمْ الطَّائِفَةُ النَّاجِيَةُ الْقَائِمُونَ عَلَى الْحَقِّ  ‘আহলেহাদীছরাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল। যারা হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন’।[7]

ইমাম হাফছ বিন গিয়াছ এবং ইমাম আবুবকর বিন আইয়াশ (রহঃ)-এর বক্তব্যকে সমর্থন ও সত্যায়ন করতঃ ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, তারা দু’জন সত্যই বলেছেন যে, আহলেহাদীছগণ সৎ মানুষ। আর এমনটা কেনইবা হবেন না, তারা তো (কুরআন ও হাদীছের (মুকাবিলায়) দুনিয়াকে সম্পূর্ণরূপে তাদের পশ্চাতে নিক্ষেপ করেছেন।[8]

প্রখ্যাত ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,  أَوْلَى النَّاسِ بِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً  ‘ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ব্যক্তি আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে, যারা সবচেয়ে বেশী আমার উপরে দরূদ পাঠ করে’।[9] এজন্যই আহলেহাদীছ পরিবারের ছোট ছোট বালক-বালিকাদের অন্তরে হাদীছের প্রতি গভীর অনুরাগ ও আকর্ষণ বিরাজিত। আর আহলেহাদীছগণ ক্বিয়াসী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ফিক্বহী মাসআলার খুঁটিনাটি বিষয়ের পরিবর্তে কেবলমাত্র নবী করীম (ছাঃ)-এর হাদীছ বর্ণনাকেই পরকালে সৌভাগ্যবান হওয়ার মাধ্যম মনে করেন। তাই ইমাম আবূ হাতেম ইবনে হিববান আল-বাসতী (রহঃ) উপরোক্ত হাদীছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা উদ্ভাবন করেছেন। তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামত দিবসে আহলেহাদীছগণের রাসূল (ছাঃ)-এর সর্বাধিক নিকটে থাকার দলীল উক্ত হাদীছে বিদ্যমান। কেননা এই উম্মতের মধ্যে আহলেহাদীছদের চাইতে কোন দল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর বেশী দরূদ পাঠ করে না।[10]

এত ফযীলত ও মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্তেবও কতিপয় ব্যক্তি আহলেহাদীছদের বিরোধিতা করা, তাদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ, উপহাস-পরিহাস এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করাকে নিজেদের পৈত্রিক অধিকার মনে করে। সম্ভবত এই সকল আহলেহাদীছ বিরোধীদের উদ্দেশ্য করেই ইমাম আহমাদ বিন সিনান আল-ওয়াসিত্বী (রহঃ) মন্তব্য করেছেন, لَيْسَ فِى الدُّنْيَا مُبْتَدِعٌ إِلاَّ وَ هُوَ يَبْغَضُ أَهْلَ الْحَدِيْثِ-  ‘দুনিয়াতে এমন কোন বিদ‘আতী নেই, যে আহলেহাদীছদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে না’।[11]

ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন, ‘আমি সর্বত্র যত বিদ‘আতী এবং নাস্তিকমনা মানুষ পেয়েছি, তারা সকলেই ‘ত্বায়েফাহ মানছূরাহ’ তথা আহলেহাদীছদেরকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখত এবং আহলেহাদীছদেরকে নিকৃষ্টভাবে সম্বোধন করত (যেমন হাশাবিয়া)।[12]

অথচ আমরা তাদেরকে বুঝাতে চাই যে, أهل الحديث همُو أهل النبي وإن لم يصحبوا نفسه أنفاسه صحبوا  ‘আহলেহাদীছগণই মূলত আহলে নবী বা নবী (ছাঃ)-এর পরিবার। যদিও তারা সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেননি। তথাপি তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সুগন্ধীযুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নির্গত অমর বাণী দ্বারা উপকৃত হয়েই আসছেন’।

আলোচ্য গ্রন্থটি শায়খ হাফেয যুবায়ের আলী যাঈ রচিত একটি চমৎকার গ্রন্থ। এতে বৈশিষ্ট্যগত নাম ‘আহলেহাদীছ’-এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় প্রশ্ন, আপত্তি ও সমালোচনার জবাব প্রদান করা হয়েছে। দলীল-প্রমাণাদি উপস্থাপনের দৃষ্টিকোণ হ’তে এটি একটি  সারগর্ভ ও অনন্য পুস্তক।*

আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম এবং এর পরিচিতি :

মুসলমানদের অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। যেমন মুমিন, ইবাদুল্লাহ (আল্লাহ্র বান্দা), হিযবুল্লাহ (আল্লাহ্র দল)। তদ্রূপ ছাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন, মুহাজির, আনছার ইত্যাদি নামসমূহ। ঠিক তেমনিভাবে ঐসকল গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে ‘আহলেহাদীছ’ ও ‘আহলে সুন্নাত’ উপাধিদ্বয় ‘খায়রুল কুরূন’ বা সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ হ’তে সাব্যস্ত রয়েছে। মুসলমানদের মাঝে উভয় গুণবাচক উপাধির ব্যবহার নির্দ্বিধায় প্রচলিত আছে। বরং এর বৈধতার পক্ষে মুসলিম উম্মাহ্র ইজমা রয়েছে।
==============================
==============================
অনেকে মনে করে হানাফি মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে শাফেয়ী মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে মালেকী মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে হাম্বলি মাজহাব মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে ধুত্তুরি কিচ্ছু বুঝিনা,সুতরাং নিজের মত চলাই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আহলে হাদিস/সালাফি মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে তাবলীগ জামাত মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে হেফাজতে ইসলাম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে চরমনাই পীর মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে জামাতি ইসলাম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আটরশির পীর মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে ছারছিনা তরীকা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে দেওয়ানবাগী মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে দেউবন্দি আলেম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে বেরলভি আলেম মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে মাইজভাণ্ডারী মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে অমুক অলি মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে লেংটা বাবা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে অলৌকিক কিছু দেখানো মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার মসজিদের হুজুর মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার বুড়া পাকা দারিওয়ালা নানা/দাদা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার বাপ যা বলে সেইটাই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার মা মানেই ইসলাম !
- অনেকে মনে করে আমার সংসার মানেই ইসলাম !
::: সব সমস্যার মূল একটি জায়গায় আর সেটা হচ্ছে নিজের ধর্মগ্রন্থটা নিজে একবার অন্তত (নিজের মাতৃভাষায়) না পড়া। দুনিয়ার বিষয়ে কোন কাজ করার সময় বার বার যাচাই করে কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে বাপ দাদা, বুজুর্গি, হুজুর, আলেম, পীর, নেতা, মা, কি বলে সেইটাই মানুষের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। ইন্টারনেটে অথবা সমাজে একজন মুসলিম অন্য মুসলিম এর সাথে তর্ক না করে আর এত দলাদলি না করে শুধু একটা কাজ করলেই শব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, আর সেটা হচ্ছে কুরআন এর অনুবাদ নিজে পড়া এবং সহিহ হাদিসগুলা পড়া ও বুঝার চেষ্টা কর এবং কুরআন ও সহিহ হাদিসের রেফারেন্স সহকারে আলেমগনের কথা গ্রহণ করা।
------------------------------
লেখক :মোহাম্মদ আবু হানিফ
ahanif520@gmail.com
=============================
=============================
সালাফী কি ? সালাফী কে ?
সালাফী কি ? সালাফী কে ? ✔সালাফী কিঃ- সালাফী শব্দ এসেছে সালাফে সলেহীন থেকে। সাহাবা থেকে শুরু করে তাবে-তাবেঈন পর্যন্ত যারা ছিল ।(৩ মুসলিম জেনারেশন )যারা এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ উম্মত তাদেরকে বা তাদের ঐ সময়কাল কে সালাফে সলেহীন বলে।অর্থাৎ যারা কোরআন ও সহী হাদীস সরাসরি মেনে চলে সাহাবা থেকে তাবে-তাবেঈনদের মত করে তাদেরকে সালাফী বলে।এর পর ৪০০ বছর পর থেকে মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ✔সালাফী কারা? সালাফী তারা যারা অন্ধঅনুসরন করে না। সালাফীরাই মুলত আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। অধিকাংশ সালাফীরা দাঈ।(ইসলামের দাওয়াত দেই যারা তাদের দাঈ বলে)সালাফী নতুন কোন মাযহাব না বা কোন রাজনৈতিক দল না। ✔সালাফীদের দাওয়াত? সালাফীরা সাধারণত তাওহীদ, ও তাযকিয়াহ (আল ইমরান ১৬৪)এর দাওয়াত দিয়ে থাকে। ✔সালাফীদের দাওয়াতের লক্ষ্যঃ- ১।একমাএ অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ। ২।সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহী হাদীস অনুসারে করতে হবে। ৩। কোরআন ও সহী হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে। ৪।সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে বা ইজমাই না থাকলে সে সকল বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ (শরীয়ত গবেষণা) করবেন,কোরআন বা সহী হাদীস বিরোধী ইজতিহাদ হলে চলবে না। ৫।কোনভাবেই ধর্মীয় ব্যাপারে দলিল ছাড়া কারো উক্তির অনুসরন করা চলবে না। ✔সালাফীদের বৈশিষ্ট্যঃ- ১।তাদের নিকট কোন কিছু পেশ করলে আগে তারা তার যাচাই করে সহী নাকি যয়িফ না জাল হাদীস। ২।সব কিছুর উর্ধ্বে আল্লাহ ও তার রাসুল। ৩।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ শেষ নাবী ও রাসুল মানা কে ইমানের অন্যতম শর্ত । ৪।রাসু্লুল্লাহ সাঃ নুরের তৈরী নন আমাদের মত মাটির তৈরী সর্বশ্রেষ্ট মানুষ ও নাবী সাঃ। ৫।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ ছাড়া ভুলের উর্ধ্বে কেউ নয়। ৬।মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ এর ৪ খলিফাকে খুলাফায়ে রাশেদীন বলে বিশ্বাস করা। ৭।আল্লাহ নিরাকর নয় ও আরশে সমুন্নত ৮।যতবড় জ্ঞানী বা শক্তিশালী ব্যাক্তি হোক না কেন কোরআন ও সহী হাদীসের বিপরীত হলে তার কথা মানে না আর কোরআন ও সহী হাদীসের পক্ষে হলে গোলামের মত মানে। ৯।ইমান বাড়ে ও কমে বলে বিশ্বাস করে। ১০।আবু হানীফা (রহ),ইমাম মালেক (রহ),ইমাম শাফেয়ী (রহ),ইমাম আহমাদ (রহ) ৪ ইমাম কে আমরা শ্রদ্ধা করি। ১১।কারও তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরন করে না। ১২।শুধু কুতবে সিত্তাহই আমলের জন্য অধিক গুরুত্ব মানে ।অন্যান্য কিতাবের সাহী ও হাছান হাদিস ও গ্রহন যোগ্য & আমল যোগ্য হিসাবে গ্রহন করে। ১৩।ইলমে গায়েবের কথা একমাএ আল্লাহ জানে। ১৪।মির্জা আহমেদ কাদিয়ানী কে অমুসলিম মানে। ১৫।এক সাথে ৩ তালাক দিলে এক তালাক গন্য হবে। ✔সালাফী সম্পর্কে ভুল ধারনাঃ- ১।অনেকে মনে করে এরা সালাফী ও শাফেয়ীরা এক মত ২।অনেকে মনে করে সালাফীরা মাযহাব মানে না মানে লা মাযহাব (নেই মাযহাব)হ্যাঁ সালাফীরা বানোয়াট মাযহাব মানে না ।কারন ৪ ইমাম কখনই বলেননি তোমরা আমাদের অনুসরন করো কিন্তু তারা বলে গেছে নবী সাঃ কে অনুসরন করতে।আর মাযহাব মানার কোন আদেশ পবিএ কোরআন ও সহী হাদীসে নাই। ৩।অনেকে মনে করে মুহাম্মদ বিন আঃ ওহাবের শির্ক ও বিদআতের বিরুদ্ধে আন্দোলন।আর সালাফী এর মতবাদ আজ থেকে ২০০ শত বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। ✔সালাফীরা কি লা মাযহাব? সালাফীরা মুসলিম।সালাফীরা ১০০% হানাফী,১০০% শাফেঈ,১০০%মালেকী,১০০% হাম্বলী। সালাফীদের ভয়ঃ- সালাফীরা শিরিক ,বিদয়াত ও ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ গুলোকে ভয় পায়,আর দুর্বল ও যয়িফ হাদীস অনুযায়ী আমল করতে ভয় পায়। ✔সালাফীদের অন্যতম বৈশিষ্টঃ- অধিকাংশ সালাফীরা ওয়াজ মাহফিলে বা কিছু বলতে গেলে কোরআন ও সহী হাদিসের দলিল সহকারে বলে থাকে।কোন সুরা কোন আয়াত কত নং হাদীস সহকারে বলে। ✔সালাফিদের লক্ষ উদ্দেশ্য: সালাফিরা এমন এক রাস্ট্র চায় যেখানে থাকবে না ইসলামের নামে কোন দল/গোড়ামাজহাবী মতবাদ & থাকবে না প্রগতীর নামে পশ্চিমা/ ইহুদি কালচার /মতবাদ,থাকবে না ইসলামের নামে গনতন্ত্র/জংজ্ঞীবাদ,দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের ঈমান ও আমলের পরিশুদ্ধতা এনে প্রয়োজনে ইমামের নেতৃত্বে জিহাদের মাধ্যমে ইসলামী রাস্ট্র গঠন করে একমাত্র কুরান & সাহী সুন্নার আলোকে দেশ পরিচালীত হবে। মুসলীম নাম থাকার পর ও কেন সালাফি/আহালে হাদিস/আহালে সুন্নাহ পরিচয়ের প্রয়োজন হল: এই প্রসংজ্ঞে উত্তর দিচ্ছেন সৌদি আরবের উচ্চ উলামাদের অন্য তম : ফাজিলাতুশ শাইখ রামাদান আল হুজুরী(হাফি:) Watch "Why One Should Call Himself Salafee or Ahlul Hadeeth by Shaykh Ramzaaan al-Haajiree" on YouTube -
https://www.youtube.com/c…/UCdKbDqIqx9PEsEV3AJ8YBTA/featured
সালাফীরা অধিকাংশ লোক দাঈ (ইসলামের দাওয়াত দেই যারা তাদের দাঈ বলে,আরব দেশে সালাফি, ভারত উপমহাদেশে আহালুল হাদিস,আফ্রিকা মহাদেশে আনসারুস সুন্নাহ নামে হিসাবে পরিচিত। আহালুল হাদিস সম্পকে কাবা শরীফের ইমামের বক্তব্য কি? Watch "Ahle Hadees Hi Firqa Najia Hai By Imam E Kaba Shaikh Khalid Al Ghamdi Hafizahullah" on YouTube - https://youtu.be/FbKsbCtEKjs
------------------------------
লেখক :মোহাম্মদ আবু হানিফ
ahanif520@gmail.com
www.facebook.com/ahanif520
সালাফি কারা ? সালাফি অর্থ  কি? কাদেরকে সালাফি বলা হয়? আন্দোলন কি? Salafi? What does Salafi mean? Who is called Salafi? What is movement?

সালাফি কারা ? সালাফি অর্থ কি? কাদেরকে সালাফি বলা হয়? আন্দোলন কি? Salafi? What does Salafi mean? Who is called Salafi? What is movement?

 সালাফি কারা ? সালাফি অর্থ  কি? কাদেরকে সালাফি বলা হয়? আন্দোলন কি? Salafi? What does Salafi mean? Who is called Salafi? What is movement?



সালাফি অর্থ  কি?
উত্তরঃ
সালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ পূর্বপুরুষ। আর ব্যবহারিক অর্থ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষগণ। অর্থাৎ সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ, যাঁদের ব্যাপারে রাসূল (স) বলে গিয়েছেন, তাঁরা হলেন উম্মাতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মাত
আর সালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের প্রথম তিন যুগের মানুষ ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাঁদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফিবাদ বলা হয়।

কাদেরকে সালাফি বলা হয়?
উত্তরঃসালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের প্রথম তিন যুগের মানুষ ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাঁদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফিবাদ বলা হয়।

 আন্দোলন কি?

উত্তরঃ 
সালাফি আন্দোলন (আরবিسلفية‎‎) সুন্নি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন। এটি সালাফিবাদ নামেও পরিচিত।


সালাফিদের সংক্ষিপ্ত  পরিচিতিঃ


সালাফি আন্দোলন (আরবিسلفية‎‎) সুন্নি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত একটি আন্দোলন। এটি সালাফিবাদ নামেও পরিচিত।

সালাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ পূর্বপুরুষ। আর ব্যবহারিক অর্থ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষগণ। অর্থাৎ সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ, যাঁদের ব্যাপারে রাসূল (স) বলে গিয়েছেন, তাঁরা হলেন উম্মাতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মাত। আর সালাফদের অনুসারীগণ হল সালাফি। ইসলামের প্রথম তিন যুগের মানুষ ইসলামকে যেভাবে বুঝতেন আর পালন করতেন, হুবহু তাঁদের মত করে ইসলাম বোঝা আর পালন করাকে সালাফিবাদ বলা হয়।

এই আন্দোলনে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের বিশেষ অবদান আছে। তিনিও একজন সালাফি পণ্ডিত ছিলেন। সালাফিরা মাজার কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের বিরোধীতা করে। সালাফিবাদ ইসলামের আক্ষরিক, কঠোর ও বিশুদ্ধ চর্চা এবং বিশেষত সালাফ তথা ইসলামের প্রথম যুগের চর্চার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সালাফিবাদ অন্যতম প্রভাবশালী ও দ্রুত বর্ধনশীল মতাদর্শ।[১][২][৩][৪] বিশ্বে মুসলিমরা যে দুইটি প্রধান মতবাদের অনুসরণ করে, তার একটি হলো সুফিবাদ, আরেকটি হলো সালাফিবাদ। সালাফিবাদ সুফিবাদের বিরোধিতা করে। অধিকাংশ সালাফী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। আবার তাদের অনেকে নির্দিষ্ট কোন মাযহাব এর অনুসরণ করে না।সালাফিরা হাম্বলী মাযহাবকে তুলনামূলক বেশি অনুসরণ করলেও কখনো নির্দিষ্ট একটি মাযহাবের উপর আঁকড়ে ধরে থাকে না, আবার কোনো মাযহাবকে ফেলেও দেয় না। সালাফিবাদে হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, হাম্বলী এই চার মাযহাবকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।

ইসলামের দ্বিতীয় শতাব্দীতে গড়ে উঠা আহলুল হাদিস আন্দোলন সালাফি আন্দোলনের সাথে একই সূত্রে গাঁথা। শারয়ী বিষয়ে সালাফিদের সাথে অন্যান্য মতালম্বি মুসলিমদের মতপার্থক্য রয়েছে। তারা কিছুসংখ্যক বিশেষ দিন এবং বিষয় যেমন, শবে বরাতপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীগুরুজনের পায়ে চুম্বন/সালাম করা ইত্যাদি ইসলামে যোগ হওয়া নতুন জিনিস হিসেবে বিশ্বাস করে এবং এগুলো উৎযাপন করে না।

২০১৫ সালে মিশরে মিশরীয় সরকার সালাফিদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[৫]




  


الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على أشرف المرسلين، نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين، ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين. أما بعد

জীবনে চলার পথে একটি জীবন-পদ্ধতি চাই। আর সেটা হওয়া চাই বিশুদ্ধ ইসলাম। আর সেটা হল সালাফিয়াত বা সালাফী জীবন-পদ্ধতি। এ পথ ও পদ্ধতিই হল সঠিক ও শুদ্ধ। এটাই হল মহান আল্লাহর সরল পথ। এটাই মহানবী ও তাঁর সাহাবাবর্গ (রাঃ)-এর পথ। এ পথের পথিকরাই হল ইহকালে সাহায্যপ্রাপ্ত এবং পরকালে মুক্তিপ্রাপ্ত। এটাই হল ৭৩ দলের মধ্যে একমাত্র পরিত্রাণ লাভকারী দল। এটাই হল। ইসলামের মূল স্রোতধারা। এই দলটির পরিচয় হয়তো সকলের জানা নাও থাকতে পারে। অথবা জানার মধ্যে কোন গোলমাল থাকতে পারে, তাই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

পাঠকের খিদমতে বক্ষমাণ পুস্তিকাটির মূল আরবী হল মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের প্রণয়ন। অনুবাদ আমার এবং এর শেষে সংযোজিত পরিশিষ্ট আমার। আশা করি পাঠক উপকৃত হবেন। এবং সালাফিয়াত সম্বন্ধে তার অনেক সন্দেহ ও বিরোধী মনোভাবের অবসান ঘটবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সত্যিকারার্থে ‘সালাফী’ হওয়ার তওফীক দিন। আমীন।

বিনীত-

আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী

২১/২/৪১, ২০/১০/১৯


إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعود بالله من شرور أنفسنا وسيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادی له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمد عبده ورسوله

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا * يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

أما بعد : فإن أصدق الحديث كتاب الله وخير الهدي هدي محمي، وشر الأمور محدثاتها، وكل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة، وكل ضلالة في النار

অতঃপর মহান আল্লাহর প্রশংসার সাথে শুরু করি এবং তার সকল কল্যাণের উপর তার স্তুতি বর্ণনা করি। যেহেতু এমন কোন কল্যাণ নেই, যা তার সাহায্য ছাড়া লাভ করা যায়। আর আমার এবং আপনাদের প্রতি তার পরিপূর্ণ অনগ্রহ ও নিয়ামতের অন্যতম বিষয়। এই যে, তিনি আমাদের জন্য এই বৰ্কতময় শহর মক্কা মুকার্‌রামায় এই সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। যেখানে আল্লাহর গৃহসমূহের একটি গৃহে সমবেত হয়ে আমরা আল্লাহর যিকর করার সুযোগ লাভ করেছি। অতএব আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাদের দলভুক্ত করেন, যারা কথা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে এবং তার মধ্যে সর্বোত্তম কথার অনুসরণ করে। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা দুআ কবুলকারী।[১]

ব্রাদারানে ইসলাম!

মুহাম্মাদ (সা.) রসূল হয়ে প্রেরিত হওয়ার পূর্বে মানুষ অজ্ঞতা ও অন্ধতায় ছিল। ছিল শির্ক, যুলম ও ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। অতঃপর আল্লাহ সৃষ্টির সর্দার মুহাম্মাদ (সঃ)-কে রসূলগণের আগমন বন্ধ থাকার পর বাঁকা মিল্লতকে সোজা করার লক্ষ্যে প্রেরণ করলেন।

যাতে তারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' (আল্লাহ ছাড়া সত্য উপাস্য নেই) বলে এবং সফলতা লাভ করে। সুতরাং তার সাথে হক আগমন করল এবং বাতিল বিলীন হল। তার সাথে হিদায়াত আগমন করল, আগমন করল জীবন, আগমন করল ন্যায়পরায়ণতা। আল্লাহ তার মাধ্যমে শির্ককে নিশ্চিহ্ন করলেন। আল্লাহ (জাল্লা ফী উলাহ) তাকে সারা বিশ্ববাসীর জন্য করুণা স্বরূপ সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করলেন। প্রেরণ করলেন তার প্রতি বিশ্বাসীর জন্য সুসংবাদদাতারূপে এবং যে। তার অবাধ্য হয় ও তার আদর্শে বাধা সৃষ্টি করে তার জন্য সতর্ককারীরূপে। তিনি তার মাধ্যমে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করলেন। আল্লাহ (জাল্লা ফী উলাহ) বলেছেন,

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ قَدْ جَاءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ ۚ قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ * يَهْدِي بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيهِمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

“হে ঐশীগ্রন্থধারিগণ! আমার রসূল তোমাদের নিকট এসেছে, তোমরা কিতাবের যা গোপন করতে, সে তার অনেক অংশ তোমাদের নিকট প্রকাশ করে এবং অনেক কিছু (প্রকাশ না করে) উপেক্ষা করে থাকে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট হতে জ্যোতি ও সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় এ (জ্যোতির্ময় কুরআন) দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে (কুফরীর) অন্ধকার হতে বার করে (ঈমানের) আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।” (মায়িদাহঃ ১৫-১৬)।

মুফাসসিরগণের ইমাম, ইমাম হাফেয আবু জাফর বিন জারীর ত্বাবারী তার তফসীরে (৬/ ১৬১) উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেছেন, 'নূর মানে মুহাম্মাদ (সা.), যার মাধ্যমে আল্লাহ হক আলোকিত করেছেন, ইসলামকে বিজয়ী করেছেন, শির্ককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। সুতরাং তিনি তার জন্য নূর (আলো), যে তার মাধ্যমে আলোকিত হতে চায়, যার দ্বারা হক স্পষ্ট করতে চায়।

ইমাম বুখারী ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, আত্বা’ বিন ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ)-এর সাক্ষাতে বললাম, 'তাওরাতে উল্লিখিত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গুণাবলী সম্পর্কে আমাকে বলুন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহর কসম! তিনি কুরআনে বর্ণিত কিছু গুণে তাওরাতেও গুণান্বিত। (যেমন,) “হে নবী! আমি তো তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে” (আহযাবঃ ৪৫) এবং নিরক্ষর (আরব)দের জন্য নিরাপত্তারূপে। তুমি আমার দাস ও রসূল। আমি তোমার নাম রেখেছি ‘আল-মুতাওয়াক্কিল’ (আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল)। তিনি রূঢ় ও কঠোর নন। হাটে-বাজারে হৈ-হুল্লোড়কারীও নন। তিনি মন্দকে মন্দ দ্বারা প্রতিহত করেন না। বরং তিনি ক্ষমা ও মার্জনা করে দেন। আল্লাহ তাঁর কখনোই তিরোধান ঘটাবেন না, যতক্ষণ না তিনি তার দ্বারা বাকা (কাফের) মিল্লাতকে সোজা করেছেন তথা তারা “লা ইলাহা। ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার দ্বারা বহু অন্ধ চক্ষু, বধির কর্ণ ও বদ্ধ হৃদয়কে উন্মুক্ত করেছেন। (বুখারী ২১২৫, ৪৮৩৮নং)

ইমাম তিরমিযী জামে’ ও ‘শামায়েল’ গ্রন্থে এবং ইমাম ইবনে মাজাহ সুনান গ্রন্থে সহীহ সুত্রে বর্ণনা করেছেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, যখন সেই দিন এল, যে দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় প্রবেশ করলেন, তখন তার সব কিছু আলোকিত হয়ে উঠল। অতঃপর যখন সেই দিন এসে উপস্থিত হল, যে দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন, তখন তার সব কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর (দাফনকার্য সেরে) আমাদের (ধুলাময়) হাত না ঝাড়তেই আমরা আমাদের হৃদয়কে ভিন্নরূপে পেলাম![২] এই অভিব্যক্তি, রসূলগণের সর্দার-কে হারিয়ে ফেলার অন্তর্জালা এবং তাঁদের সেই কঠিন সন্ধিক্ষণ সম্বন্ধে অভিব্যক্তি ও মনের ভাব প্রকাশ এমনই ছিল যে, তার চির বিদায় এবং অহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুঃখে নিজেদেরকে ভিন্ন মানুষ ভাবতে লাগলেন।[৩]

ইমাম বুখারী ‘সহীহ’ (৩৫৮ ৪নং)এ জাবের (রাঃ) কর্তৃক বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) জুমআর দিন একটি বৃক্ষের উপর অথবা খেজুর বৃক্ষের একটি কান্ডের উপর খুতবা দেওয়ার জন্য দাঁড়াতেন। এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা পুরুষ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার জন্য কি একটি মিম্বর বানিয়ে দেব?’ নবী (সা.) বললেন, “তোমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পারো।” অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বর বানিয়ে দিলেন। যখন জুমআর দিন এল, নবী (সা.) মিম্বরে বসলেন, তখন কান্ডটি শিশুর মতো চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। নবী (সা.) মিম্বর থেকে নেমে এসে ওটাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু কান্ডটি শিশুর মতো আরো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল।

বর্ণনাকারী বলেন, 'কান্ডটি এ জন্য কাঁদছিল, যেহেতু সে খুতবাকালে নিজে কাছে থেকে যিকর শুনতে পেত।

ইমাম হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লাহ) যখন উক্ত হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন কেঁদে ফেলতেন এবং বলতেন, 'ওহে মুসলিমগণ! রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষাতের আগ্রহে কাঠ গুনগুনিয়ে কেঁদে ওঠে! সুতরাং তোমরা এ কথার বেশি হকদার যে, তোমরা তাঁর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে।”[৪]

এই ভূমিকার পর এবার মূল বক্তব্যের দিকে যাই, যার শিরোনাম আপনারা শুনেছেন, সালাফিয়াত কী?

এই স্থানে যখন বিষয়টির সকল দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য সময় পর্যাপ্ত নয়, তখন এর কয়েকটি পয়েন্ট নির্বাচন করে আলোচনা শুরু করছি।

প্রথম পয়েন্টঃ “সালাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ

দ্বিতীয় পয়েন্টঃ পরিভাষায় ‘সালাফ’ কারা?

তৃতীয় পয়েন্টঃ সালাফে সালেহ’ এর কতিপয় প্রতিনাম।

চতুর্থ পয়েন্টঃ সালাফিয়াতের অনুসরণ করা ও তার সাথে সম্বন্ধ জোড়ার বিধান।

পঞ্চম পয়েন্টঃ সালাফ ও সালাফিয়াতের অনুসরণ করার মাহাত্ম্য

যষ্ঠ পয়েন্টঃ সালাফী মানহাজের (মতাদর্শের) চিহ্ন ও পথনির্দেশিকা

সপ্তম পয়েন্টঃ উপক্রমণিকা, আর তাতে থাকবে আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত।


[১]. এই লেকচারটি মক্কা মুকারামা (শারাফাহাল্লাহ) এর আযীযিয়াহ সেকশনের জামে’ ফকীহ মসজিদে রোজ বৃহস্পতিবার ১০ম শাবান ১৪৩১ হিজরীতে পেশ করা হয়। যা সেখানকার ‘আস-সাবীল’ মসজিদে অনুষ্ঠিত সংস্কারক ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অধিবেশনের সক্রিয়তার একটি অংশ হিসাবে কার্যক্রমভুক্ত করা হয়।

[২]. তিরমিযী ৩৬ ১৮, শামায়েল ৩৭৫, ইবনে মাজাহ ১৬৩ ১, আহমাদ ১৩৩ ১২, ইবনে হিব্বান, ইহসান ৬৬৩৪নং, হামে ৩/৫৭, আল্লামা আলবানী সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ (১৩২২নং)এ এবং তার আরো অন্য গ্রন্থসমূহে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।

[৩]. আল্লামা আলবানীর টীকা দ্রঃ সংক্ষিপ্ত শামায়েল মুহাম্মাদিয়াহ ১৯৭পৃঃ

[৪]. সিয়ারু আ'লামিন নুবালা’ ৪/৫৭০, সংক্ষিপ্ত তারীখে দিমাশ্‌ক ১/ ১৮৪
 বর্তমানে সালাফী কারা?

যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কিরাম, তাদের অনুগামী তাবেঈন, তাঁদের অনুগামী তাবা-তাবেঈন ও দীনের ইমামগণের অনুসরণ করে সহীহ হাদীসের ফায়সালাকে মাথা পেতে গ্রহণ করে, তাদের বুঝে কুরআন ও হাদীস বোঝে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে, বিশ্বাস করে, ইবাদত করে, আচরণ করে, দাওয়াত ও তরবিয়ত দেয়, সেই হল সালাফী। সেই হল সালাফী মানহাজ ও আদর্শের অনুসারী।

ভালোভাবে লক্ষণীয় যে, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কেবল একজনের অন্ধানুকরণ করে না, বরং উলামার অনুসরণ করে এবং দলীলপুষ্ট ও যুক্তিযুক্ত মতটিকে গ্রহণ করে। তাহলে সালাফী জামাআতের প্রতিষ্ঠাতা কে? সালাফিয়াত কোন মতবাদ নয়, সংগঠিত দল নয়, বিচ্ছিন্ন ফির্কা নয়। বরং তা হল ইসলামের মূল স্রোতধারা। মুসলিমদের সঠিক জীবন-পদ্ধতি। সুতরাং সঠিক ইসলামের এ জামাআতের প্রতিষ্ঠাতা কোন মানুষ নয়। অথবা বলা যায়, এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। অবশ্য যুগে যুগে তার সংস্কারক আছে।

ইসলামী রাষ্ট্র রচনায় সালাফী নীতি

সালাফীদের মানহাজে তওহীদ হল, সকল প্রকার ইবাদত; যেমন, দুআ বা প্রার্থনা, সাহায্য ভিক্ষা, বিপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে আহ্বান, যবেহ, নযর-নিয়ায, ভরসা, আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার ও শাসন করা ইত্যাদিতে আল্লাহকে একক মানা। এটাই হল সেই বুনিয়াদ যার উপর সঠিক ইসলামী রাষ্ট্র রচিত হয়।

সালাফীরা মনগড়া সমস্ত মানব রচিত আইন-কাননকে অস্বীকার করে। কারণ তা ইসলামী আইনের বিরোধী ও পরিপন্থী। আর আল্লাহর কিতাবকে জীবন ও রাষ্ট্র-সংবিধান রূপে মেনে নিতে সকলকে আহান। করে---যে কিতাবকে মহান আল্লাহ মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সুখ-সমৃদ্ধির জন্য অবতীর্ণ করেছেন। আর তিনিই অধিক। জানেন, কী তাদের জন্য কল্যাণকর এবং কী অকল্যাণকর। সেই করআন অপরিবর্তনীয়। যার বিধান কোন কালেও পরিবর্তিত হবে না। এবং যুগের বিবর্তনে তার ক্রমবিকাশও ঘটবে না।

নিশ্চিতভাবে সারা বিশ্বের এবং বিশেষ করে মুসলিম-বিশ্বের দুর্গতি, বিভিন্ন কষ্ট, লাঞ্ছনা এবং অবজ্ঞার সম্মুখীন হওয়ার একমাত্র কারণ হল আল্লাহর কিতাব এবং তার রসুলের সুন্নাহ দ্বারা জীবন ও রাষ্ট্র পরিচালনা ত্যাগ করা। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রগতভাবে ইসলামী শিক্ষা ও নির্দেশের প্রতি প্রত্যাবর্তন ছাড়া মুসলিমদের কোন মর্যাদা ও শক্তি ফিরে আসতে পারে না। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায় কী?

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং তা টিকে থাকতে হবে। সুতরাং তার ইমারত গড়তে হলে তার বুনিয়াদ মজবুত করতে হবে, তার ইট পাকা হতে হবে, তার সিমেন্ট নির্ভেজাল হতে হবে। তা না হলে সে ইমারত সদ্যঃপাতী ও ভঙ্গুর হবে।

সালাফীদের মতে আকীদার পরিশুদ্ধি এবং বিশুদ্ধ আকীদার উপর জনগোষ্ঠীর তরবিয়ত ও প্রশিক্ষণ সর্বাগ্রে শুরু করা জরুরী। যাতে এমন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তৈরী হয়, যারা ইসলামী শাসনকে উন্মুক্ত ও উদার মনে গ্রহণ ও মান্য করে চলবে এবং নিপীড়িত ও বিপদগ্রস্ত হলে অকাতরে সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে---যেমন পূর্ববর্তী সলফগণ সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে গেছেন। সালাফীরা মনে করে, পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক ভােটাভুটি অথবা সামরিক অভ্যুত্থান, বিদ্রোহ বা খুনাখুনির মাধ্যমে মুসলিম দেশে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হবে না। আর হলেও তা স্থায়ী হবে না। পরন্তু সালাফীরা দলাদলিতেও বিশ্বাসী নয়। অতএব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও স্থায়ী করতে হলে রাসূলুল্লাহ কি-এর পদ্ধতি গ্রহণ ও অবলম্বন করতে হবে। আকীদার সংশুদ্ধি ও সঠিক ইসলামী তরবিয়তের মাধ্যমে মাদানী জীবন-ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।

ইসলামী জাগরণ আনয়নের যে মৌলিক পন্থা আছে, তার সঠিক প্রয়োগ চাই। সংশোধন ও তরবিয়ত। সঠিক ইলম শেখা ও শিখানোর মাধ্যমে শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করা এবং করআন ও সহীহ সন্নাহর। সঠিক তরবিয়ত দানের মাধ্যমে মানুষ তৈরি করা। যারা শাসন মান্য করবে, তারাই যদি অপ্রস্তুত থাকে, তাহলে জোর-জবরদস্তি করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের উপর শাসন চাপিয়ে দিলে তো বাঞ্ছিত শান্তির রাজ্য কায়েম হবে না। ভালো ফসল উৎপাদন করতে হলে আগে জমি প্রস্তুত করতে হবে। মজবুত অট্টালিকা গড়তে হলে ভিত্তি মজবুত করতে হবে, ইটগুলিকে পরিপক্ব করতে হবে।

সালাফীদের বক্তব্য হল, তোমাদের হৃদয়ের ভূমিতে আগে ইসলাম কায়েম কর, তবেই তোমাদের দেশের ভূমিতে ইসলাম কায়েম হবে। আগে সংশোধন, তারপর সংগঠন। জিহাদের মাধ্যমেও ইসলাম কায়েম করতে হলে তার নানা শর্ত আছে, তা পূরণ হতে হবে। তার আগে জিভ ও কলম দ্বারা জিহাদ অব্যাহত রাখতে হবে। আর সন্ত্রাস করে ইসলামের ক্ষতি বৈ কোন লাভ হবে না।

সালাফী দাওয়াত পদ্ধতি

ফিরকাহ নাজিয়াহ সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে। এই দল বিদআতী সকল নীতি এবং সর্বনাশী দলসমূহকে প্রতিহত করে---যে দলসমূহ উম্মতকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ও দ্বীনে বিদআত রচনা করে রসূল (সা.) এবং তার সাহাবার সুন্নাহ (ও নীতি) থেকে দুরে সরে আছে। বিদআতকে প্রতিহত করার জন্য এবং সহীহ আকীদা ও আমলের। দিকে মানুষকে আহবান করার পদ্ধতি হল নিম্নরূপঃ এই দাওয়াতের সর্বাগ্রে রয়েছে মৌলিক বিষয়, সহীহ ইলম। মহান আল্লাহ বলেছেন,

قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ

“তুমি বল, এটাই আমার পথ। আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করি সজ্ঞানে আমি এবং আমার অনুসারিগণও। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (ইউসুফঃ ১০৮)

অতঃপর ইলমকে পরিবর্তন, সংস্কার ও সংশোধনের কাজে ব্যবহার।

প্রথম ধাপ হলঃ তাসফিয়াহ

এর অর্থ হল দ্বীনকে প্রত্যেক সেই বিকৃতি, অপব্যাখ্যা ও উৎক্ষিপ্ত কর্দম থেকে পরিষ্কার করা, যা তার সৌন্দর্যকে মান করে দিয়েছে এবং তার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সালাফী উলামাগণ সহীহ দ্বীন পালন ও বহন করেন এবং দ্বীনে অনুপ্রবিষ্ট ভেজালকে চিহ্নিত ও সাফাই করেন। মহানবী (সা.) বলেছেন,

يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين وانتحال المبطلين

“এই ইলমকে প্রত্যেক শতাব্দীর নির্ভরযোগ্য (বিশ্বস্ত) লোকে বহন করবে। তারা তা হতে অতিরঞ্জনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার ও মুখদের অপব্যাখ্যা দূরীভূত করবে।” (বাইহাক্বী ২১৪৩৯, মিশকাত ২৪৮নং)

এর উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারেঃ অতিরঞ্জনকারীদের বিকৃতিঃ যেমন সর্বেশ্বরবাদী সূফীদের বিকৃতি, শিয়া ও রাফেযীদের বিকৃতি; যারা আহলে বায়তের ভালোবাসায় অতিরঞ্জন করে দ্বীনে বহু বিকৃতি সাধন করেছে এবং তারাই ইসলামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও কঠিন ফিতনাবাজ। খাওয়রিজের বিকৃতি, যারা কুরআন মানতে অতিরঞ্জন করে হাদীস অস্বীকার করেছে এবং সাহাবাদেরকে কাফের বলেছে। অনুরূপ মুতাযিলা, জাহমিয়্যাহ, কাদারিয়্যাহ, জাবারিয়্যাহ, মুরজিআহ প্রভৃতি ফির্কা ও তাদের অনুগামীদের অতিরঞ্জন ও বিকৃতি প্রসিদ্ধ।

বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচারঃ যেমন ইসলামের দার্শনিকরা, যারা ইসলামের উপর আক্কেলের ঘোড়া ছুটিয়েছে এবং দ্বীনকে যুক্তিভিত্তিক করতে গিয়ে ধ্বংস করতে প্রয়াসী হয়েছে। বর্তমানেও বহু বিজ্ঞানী ও যুক্তিবাদী পাওয়া যায়, যারা দ্বীনের মর্যাদা মলিন করতে কার্পণ্য করে না।

মূর্খদের অপব্যাখ্যাঃ যাদের জ্ঞান ও বিবেকগ্রাহ্য নয় ধারণা করে তারা দ্বীনের অপব্যাখ্যা করে অথবা তাদের মযহাব ও খেয়ালখুশির প্রতিকূল বলে তারা কুরআন ও সহীহ হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করে।

আলহামদু লিল্লাহ, সালাফী উলামাগণ সে সবের খন্ডন করেছেন এবং সঠিক দ্বীনের মাহাত্ম্য ও মর্যাদাকে অক্ষুন্ন রেখেছেন।

দাওয়াতের দ্বিতীয় ধাপ হলঃ তাজদীদ

মুমিনের হৃদয়ে ঈমান পুরনো হয়ে যায়, তাকে নবায়ন করতে হয়। মনে কালিমা ও জং পড়ে, তা দূরীভূত করতে হয়, ঝালিয়ে নিতে হয়। দ্বীনের মধ্যে কুসংস্কারের জঞ্জাল ও আবর্জনা পড়ে, তা পরিষ্কার করতে হয়, সুন্নাহ মৃত হয়ে যায়, তা পুনর্জীবিত করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

إن الله يبعث لهذه الأمة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها دينها

“নিশ্চয় আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর মাথায় এমন ব্যক্তি প্রেরণ করবেন, যে তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে নবায়ন করবে।” (আবু দাউদ ৪২ ৯৩, হাকেম ৮৫৯২নং)

তৃতীয় ধাপ হলঃ ইসলাহ

ইসলাহ মানে সংশোধন করা, মেরামত করা, নষ্ট বা খারাপ হয়ে। যাওয়াকে ঠিক বা ভালো করা, অচলকে সচল করা ইত্যাদি।

বর্তমানে ইসলাম বিশ্বের বহু জায়গায় স্বমহিমায় বলিষ্ঠ আছে। কিন্তু প্রত্যেক পূর্ণতার লয় আছে, ক্ষয় আছে। এক সময় সারা বিশ্বে ইসলাম আসবে। আবার এক সময় ধীরে ধীরে ইসলাম শুরুর মতো দুর্বল ও প্রবাসীর মতো অসহায় হয়ে যাবে। কিন্তু সেই সময়েও সালাফী ইসলাহ কায়েম থাকবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

إن الإسلام بدا غريبا وسيعود غريبا كما بدا فطوبى للغرباء

“নিশ্চয় ইসলাম (প্রবাসীর মত অসহায়) অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়ে শুরুতে আগমন করেছে এবং অনুরূপ অল্প সংখ্যক মানুষ নিয়েই ভবিষ্যতে প্রত্যাগমন করবে; যেমন শুরুতে আগমন করেছিল। সুতরাং শুভসংবাদ ঐ (প্রবাসীর মতো অসহায়) অল্প সংখ্যক লোকেদের জন্য।” বলা হল, (প্রবাসীর মত অসহায়) অল্প সংখ্যক লোক কারা? তিনি বললেন,

الذين يصلحون إذا فسد الناس

“যারা মানুষ অসৎ হয়ে গেলে তাদের ‘ইসলাহ’ (সংশোধন) করে।” (আহমাদ ১৬৬৯০, ত্বাবারানীর কাবীর ৭৫৫৪, আওসাত ৩০৫৬ নং)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, তারা হল সংখ্যাগরিষ্ঠ খারাপ লোকেদের মাঝে অল্প সংখ্যক ভালো লোক, যাদের অনুগত লোকের চাইতে অবাধ্য লোকই বেশি থাকবে।” (আহমাদ ৬৬৫০, সহীহ তারগীব ও ১৮৮নং)

চতুর্থ ধাপঃ তারবিয়্যাহ

তরবিয়ত ও ট্রেনিং দেওয়া, অনুশীলন করানো, অভ্যাসী বানানো, রপ্ত করানো, কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর ভিত্তিতে সাহাবায়ে কিরামের তরবিয়তের মতো মানুষকে তরবিয়ত দেওয়ার কাজ সালাফী মুরাব্বীরা করে থাকেন। পিতামাতা যেমন সন্তান লালন-পালন করে থাকে, ঠিক সেইভাবে সালাফী রাব্বানী উলামাগণ সহীহ তরবিয়ত দানের মাধ্যমে মানুষ তৈরি করেন। তরবিয়ত চলে নিজ ঘরে, পরিবারে, তরবিয়ত চলে মসজিদে ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে। সংখ্যায় কম হলেও মানিকের খানিক ভালোর মতো মানুষ তৈরি হয়। আর মানুষের মাঝে পরিবর্তন না এলে বা আনয়ন করতে না পারলে। সার্বিক পর্যায়ে ইসলামী পরিবেশ ও শাসন কল্পনা করাও বৃথা হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ

“নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।” (রা’দঃ ১১)

ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

“এ এজন্য যে, আল্লাহ কোন সম্প্রদায়কে যে সম্পদ দান করেন, তিনি তা (ধ্বংস দিয়ে) পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আর নিশ্চিত আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ” (আনফালঃ ৫৩)

সালাফী তরবিয়ত ছাড়া মানুষের মাঝে সঠিক পরিবর্তন আসবে না। আর যেমনটি ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, 'যে জিনিস প্রাথমিক পর্যায়ের উম্মাহর ইসলাহ করেছে, সে জিনিস ছাড়া এই শেষ পর্যায়ের উম্মাহর ইসলাহ করতে পারে না।' (মাজমুউ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ১/২৪১ প্রমুখ)


সালাফী মুরাব্বী, সংস্কারক বা আলেম-মুআল্লিম

আমরা ইতিপূর্বে ইসলাহ ও তরবিয়তের ব্যাপারে রব্বানী আলেম বা দাঈর কথা বলছিলাম। তাকে জ্ঞানী হতে হবে। নচেৎ যার আলো নেই, তিনি আলো বিতরণ করবেন কীভাবে। হয়তো-বা তিনি গড়ার জায়গায় ভেঙ্গে ফেলবেন। নিম আলেমদের দাঈ বা মুফতী হওয়া, হাদীসের পরিভাষা, (মুসত্বালাহ, জারহ ও তাদীল, আসমাউর রিজাল) প্রভৃতি বিদ্যা অধ্যয়ন না করেই হাদীস সহীহ-যয়ীফ করতে শুরু করা, যথেষ্ট শরয়ী জ্ঞান নেই এমন ব্যক্তিকে আমীর বা নেতা বানানো ইত্যাদিতে অবশ্যই ক্ষতি হবে মানহাজের।

অনুরূপ আমলের ক্ষেত্রেও রাখতে হবে খেয়াল। কেবল ইলম শিক্ষা নয়, আমলেও জোর দিতে হবে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সালাফী হওয়ার অবশ্যই চেষ্টা রাখতে হবে। নচেৎ বুকে হাত বাধা, রফয়ে য়্যাদাইন করা, জোরে আমীন বলা, পায়ে পা লাগানো ইত্যাদির মাধ্যমে। সালাতে এবং তালাক প্রভৃতি কয়েটি মাসআলায় আহলে হাদীস হলে যথেষ্ট নয়। আকীদায়, ইবাদতে, চেহারায়, লেবাসে-পোশাকে-পর্দায়, লেনদেন ও চরিত্র-ব্যবহারেও সালাফী হতে হবে।

দাওয়াতী ময়দানে কেবল অসালাফী ফিকাগুলোর সমালোচনার উপর জোর দিয়ে নিজেদের আত্মসমালোচনা ত্যাগ করলে ফল আশানুরূপ ভালো হতে পারে না।

সালাফী মানহাজে দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইলমের গুরুত্ব অপরিসীম। বিনা ইলমের দাওয়াতে ফিতনা বেশি হয়। পথের দিশা হারিয়ে গিয়ে পথভ্রষ্টতাই পরিণাম হয়।

মহানবী (সা.) বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا، يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا

“নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ, আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মুখ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ৭৩০৭, মুসলিম ৬৯৭ ১নং)

যিয়াদ বিন হুদাইর বলেন, একদা আমাকে উমার (রাঃ) বললেন, 'তুমি জান কি, ইসলামকে কিসে ধ্বংস করবে?' আমি বললাম, 'জী না।” তিনি বললেন,

يهدمه زلة العالم وجدال المنافق بالكتاب وحكم الأئمة المضلين

‘ইসলামকে ধ্বংস করবে আলেমের পদস্থলন, কুরআন নিয়ে মুনাফিকের বিতর্ক এবং ভ্ৰষ্টকারী শাসকদের রাষ্ট্রশাসন।' (দারেমী ২১৪নং)

সলফে সালেহীন দ্বীনের দাঈ ছিলেন, তাদের অনুসারীদেরও উচিত দাঈ হওয়া এবং তার জন্য ইলম ও আমল-ওয়ালা হওয়া। ইলম ও আমল-ওয়ালাই প্রকৃতপক্ষে যোগ্য দাঈ। যেহেতুঃ

১। প্রত্যেক নবী দ্বীনের দাঈ ছিলেন। আর উলামাগণ নবীর ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইলমের (দ্বীনী জ্ঞানভান্ডারের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং তারাই হবেন সুযোগ্য দাঈ। যারা হবেন মানুষের আদর্শ, যাদের দাওয়াতে থাকবে হিকমত ও সুকৌশল।

২। উলামাগণ পৃথিবীর বুকে সৃষ্টির বিপক্ষে আল্লাহর হুজ্জত। আর ইম ও ফিকহ ছাড়া হুজ্জত কায়েম হয় না। সুতরাং আহলে ইলমরাই হলেন প্রকত দাঈ।

৩। উলামাগণই রাজনৈতিক প্রভাবশালী লোক। যাদের আনুগত্য করতে মহান আল্লাহ নির্দেশ দান করেছেন। তিনি বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসুল ও তোমাদের নেতৃবর্গ (ও উলামা)দের অনুগত হও।” (নিসাঃ ৫৯)।

মুজাহিদ বলেছেন, তোমাদের আহলে ইলম ও ফিকহ ব্যক্তিবর্গের অনুগত হও। উলুল আমরের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস বলেছেন, 'আহলুল ইলম। আবুল আলিয়াহ বলেছেন, 'আহলুল ইলম। সুতরাং স্পষ্ট যে, তারাই হবেন দ্বীনের দাঈ। ৪। উলামাগণই উম্মাহর বৃহত্তম স্বার্থ, সার্বিক কল্যাণ, দ্বীন ও দুনিয়া ও তার নিরাপত্তার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য মানুষ। তাই তারাই হতে পারেন দাওয়াতের জন্য নির্ভরযোগ্য।

৫। উলামাগণই রাষ্ট্রের পরামর্শদাতা ও মন্ত্রণাদাতা। দেশের রাজাপ্রজা সবাই দ্বীন ও দুনিয়ার সমস্যায় তাঁদের দিকেই রুজু করে থাকে এবং উম্মাহর ভালো-মন্দের ব্যাপারে পরামর্শ গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং তারাই হবেন দাওয়াতের ক্ষেত্রেও পরামর্শদাতা।

৬। উলামাগণ হলেন দ্বীনের ইমাম। আর এ ইমামতির আছে সুউচ্চ মর্যাদা ও বিশাল মাহাত্ম্য। দ্বীনের একটি অঙ্গ হল দাওয়াত। দাওয়াত ছাড়া দ্বীন হয় না, দ্বীন ছাড়া দাওয়াতও হয় না। বিধায় তারাই হবেন। দাওয়াতের ইমাম। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا ۖ وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ

“ওরা যেহেতু ধৈর্যশীল ছিল, তার জন্য আমি ওদের মধ্য হতে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত। ওরা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।” (সাজদাহঃ ২৪)।

৭। উলামাগণ হলেন আহল্য যিকর। আর যিকর হয় ইলম ও দাওয়াতের মাধ্যমে। সুতরাং তারাই আহলুদ দাওয়াহ। মহান আল্লাহ বলেছেন,

فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

“তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।” (আম্বিয়াঃ ৭)।

৮। উলামাগণ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। জনসাধারণের মাঝে আলেম হলেন তারকারাজির মাঝে পূর্ণিমার চাদের মতো। মহান আল্লাহ তাদের মর্যাদা সুউচ্চ করেছেন।

يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

“তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন।” (মুজাদালাহঃ ১১)।

আর মর্যাদায় সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষই দাঈ হওয়ার যোগ্য।

৯। উলামাগণই বেশি দ্বীনদার মানুষ এবং সবার চাইতে বেশি আল্লাহকে ভয় করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

“আল্লাহর দাসদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল।” (ফাত্বিরঃ ২৮)

আর তা হলে তারাই দাঈ হওয়ার বেশি হকদার। তাঁরাই দাওয়াতে অগ্রগামী হবেন এটাই স্বাভাবিক।

১০। উলামাগণই ইলম ও হিকমতের সাথে সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করে থাকেন। সুতরাং উলামাগণই হবেন দ্বীনের দাঈ।

১১। উলামাগণ আল্লাহর সাক্ষী, তিনি তাঁর তওহীদের উপর তাদেরকে সাক্ষী মেনেছেন এবং নিজের ও ফিরিবর্গের সাক্ষ্যের সাথে তাদের সাক্ষ্যকে আয়াতে সংযুক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন,

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

“আল্লাহ সাক্ষ্য দেন এবং ফিরিস্তাগণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণও সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই। তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (আলে ইমরান : ১৮)।

আর এতে নিশ্চয় তাদেরকে প্রশংসিত ও বিশ্বস্ত মানা হয়েছে। বিধায় তারাই দাওয়াতের জন্যও নির্বাচিত ও মনোনীত হবেন, এটাই স্বাভাবিক।

অবশ্যই সকল উলামা সমান নন। সকলের গুণাবলী এক নয়। সে ক্ষেত্রে যার ইলম ও আমল বেশি, তিনিই দাওয়াতের জন্য উপযুক্ত বেশি। {দ্রঃ আল-উলামা হুনুদ দুজতু শায়খ নাসের আকুল কারীম আল-আকূল।

আল্লাহর ইচ্ছায় এমন উলামা যুগে যুগে থাকবেন। গণনায় কম হলেও কিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন। তারা তাদের ইলম ও দাওয়াতের জিহাদ নিয়ে বিজয়ী থাকবেন।

لا تزال طائفة من أمتي ظاهرين على الحق لا يضرهم من خدلهم حتى يأتي أمر الله وهم كذلك

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল হক (সত্যের) উপর বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত) আসা পর্যন্ত, যারা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” (মুসলিম ৫০৫৯নং)

অন্য এক শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

لا تزال طائفة من أمتي قوامة على أمر الله لا يضرها من خالفها

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল আল্লাহর নির্দেশ (শরীয়ত)এর উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে। যে তাদের বিরোধিতা করবে, সে তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” (ইবনে মাজাহ ৭নং)

অন্য এক শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

لا يزال طائفة من أمتي ظاهرين حتى يأتيهم أمر الله وهم ظاهرون

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল বিজয়ী থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত) আসা পর্যন্ত, সে অবস্থায় তারা বিজয়ী থাকবে।” (বুখারী ৭৩১১, মুসলিম ১৯২ ১নং, আহমাদ ৪/২৪৪) অন্য এক শব্দে বর্ণিত হয়েছে,

لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة

“আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল চিরকাল কিয়ামত পর্যন্ত বিজয়ী থেকে হক (সত্যের) উপর লড়াই করবে।” (মুসলিম ৫০৫৯নং)

ইমাম বুখারী উক্ত দলটির ব্যাপারে বলেছেন, তারা হলেন আহলে ইলম (উলামা)।' (বুখারী ৭৩১১নং)। তিরমিযী বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারীর কাছে শুনেছি, তিনি আলী বিন মাদীনীর কাছে শুনেছেন, তারা হলেন আসহাবুল হাদীস। (উমদাতুল ক্বারী ৩৫/৪২৮)

হাকেম ‘উলুমুল হাদীস গ্রন্থে সহীহ সনদে আহমাদ হতে উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেছেন, তারা যদি আহলুল হাদীস না হন, তাহলে আমি জানি না যে, তারা কারা।' (ফাতহুল বারী ২০/৩৬৮)।

“তারা বিজয়ী থাকবে” অর্থাৎ, সকল মানুষের উপর তারা নিজেদের দলীল-প্রমাণ নিয়ে বিজয়ী থাকবে এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও বিজয়ী থাকবে। কলম ও তরবারি উভয় যুদ্ধে তাদেরকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। তাদের বিরোধীরা তাদের কোন প্রকার ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হবে না। তারা উলামা ও মুজাহিদ রূপে বিরোধীদের উপর সদা বিজয়ী থাকবে।

সালাফী উলামাগণ সদা-সর্বদা সতর্ক করেন, বিনা ইলমে দাওয়াত দিয়ো না। বিনা ইমে ফতোয়া দিয়ো না। আঙ্গুর হয়ে পাকার আগে কাঁচা থাকা অবস্থায় কিশমিশ হয়ো না। অল্প কিছু পড়াশোনা করে জায়েয-না জায়েয ও হারাম-হালাল বলায়, হাদীসকে সহীহ-যয়ীফ নির্ধারণ করায় দুঃসাহসিকতার সাথে নিজেকে লোকমাঝে প্রকাশ করায় গ্রহণযোগ্যতা নেই, উম্মাহর কোন কল্যাণ নেই, বরং ফিতনা আছে, বিভ্রান্তি আছে। সলফদের অন্যতম বড় আলেম তাবেঈ আব্দুর রহমান বিন আবী লায়লা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'আমি এই মসজিদে নববীতে) ৭০ জন সাহাবাকে পেয়েছি, তাদের কাউকে কোন মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হলে অথবা কোন ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কামনা করতেন। যে, তা উপস্থিত অন্য কোন আলেম সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করা হোক।

এর কারণ হল, তারা ভয় করতেন যে, তারা ভুলে পতিত হবেন, আর তার ফলে অন্যকে ভুলে পতিত করবেন। তাই তাঁদের প্রত্যেকেই এই দায়িত্ব অন্যের দিকে ফিরিয়ে দিতেন। কিন্তু বর্তমানের অবস্থা তার বিপরীত। (আল্লামা আলবানীর দর্স হতে, মাকতাবা শামেলা) এখন তো যোগ্যতা না থাকলেও নতুন কোন ফতোয়া দিতে পারলেই এবং কোন বড় আলেমের ভুল ধরতে পারলেই কিস্তিমাত! যা সালাফী মানহাজের বিপরীত। অবশ্য সঠিকভাবে উলামাদের ফতোয়া নকল। করাতে কোন দোষ নেই।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, যারা সরাসরি কুরআন ও হাদীস পড়ে মাসআলা গ্রহণ করেন, তারা ভুল করতে পারেন। যেহেতু অনেক সময় কেবল একটি আয়াত বা একটি হাদীস পড়েই বিধান গ্রহণ করলে বিপদ হতে পারে। যেমন কেবল কুরআনের অনুবাদ পড়ে এবং তার তফসীর না পড়ে বিধান নিলে সমস্যা হতে পারে।

প্রত্যেক মুসলিমই চায় মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহর উপর আমল করতে। কিন্তু আমলের সময় চোখ বন্ধ করে আমল বাঞ্ছনীয় নয়। হাদীসে আছে বা আল্লাহর নবী বলেছেন পড়ে বা শুনেই আমল করতে লেগে যাওয়া মুসলিমের উচিত নয়। যেমন উচিত নয়, কোন হাদীস শুনে তা অবিশ্বাস করা, তা দলীল স্বরূপ পেশ করা, প্রচার বা শেয়ার করা, নিজ গ্রন্থ বা বক্তৃতায় স্থান দেওয়া। বলা বাহুল্য কোন হাদীসের উপর আমল করার সময় উচিত হলঃ

১। এই দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, হাদীস হল দুটি অহীর অন্যতম।

২। হাদীসের বক্তব্যকে নির্ভুল ও নিষ্কলুষ বলে নিঃসন্দেহে মেনে নেওয়া। যেহেতু হাদীস যার তিনি হলেন নির্ভুল ও নিষ্পাপ মানুষ।

৩। সেটা সত্যপক্ষে তার হাদীস কি না, তা অনুসন্ধান করা ওয়াজেব। তা সহীহ কি না, তা জানা জরুরী।

৪। সহীহ প্রমাণিত হলে তা সর্বান্তঃকরণে মেনে নেওয়া ওয়াজেব; যদিও তা নিজ জ্ঞান ও বিবেক বহির্ভূত মনে হয় এবং তার পিছনে যুক্তি ও হিকমত না বুঝা যায়।

৫। যয়ীফ (দুর্বল), বা মওযু’ (জাল) প্রমাণিত হলে তা বর্জন করা।

৬। হাদীসের সঠিক অর্থ বুঝা। আপাতদৃষ্টিতে দুটি হাদীস পরস্পরবিরোধী মনে হলে তা সমন্বয় ও সামঞ্জস্য সাধনের চেষ্টা করা।

৭। হাদীসের নাসেখ-মনসূখ (রহিত-অরহিত) নির্দেশ সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা।

৮। হাদীসের বক্তব্য রাসুলল্লাহ -এর জন্য খাস কি না, তা জানা।

উক্ত সকল নির্দেশ পালন না করলে হাদীসের উপর আমল ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। পক্ষান্তরে প্রামাণ্য হাদীসের সঠিক বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাস ও আমল না করলেও পরিণাম অবশ্যই মন্দ হবে। হাদীসের গ্রন্থগুলিতে এ সব কথার উল্লেখ থাকে। উল্লেখ না থাকলে সত্যানুসন্ধানী মুহাদ্দিস আলেমের নিকট সে হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে আমল করতে হবে। আর এ কাজ সচেতন মুসলিমের জন্য মোটেই কঠিন নয়।


সালাফী বা আহলে হাদীস পরিচয় দেওয়া কি শরীয়ত-বিরোধী?

না, যখন ময়দানে রয়েছে শিয়া, খারেজী, মু'তাযেলী, জাহমী, আশআরী, মাতুরীদী, দেওবান্দী, বেরেলী, সূফী, ইখওয়ানী, জামাতে ইসলামী, তবলীগী প্রভৃতি নানা ফিরকা, আর তারা সকলেই দাবিতে মুসলিম, তখন সঠিক মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিমের একটা পৃথক পরিচয় হওয়া দরকার, যাতে তাকে সকলের মাঝে চেনা সহজ হয়।

অনেকে বলেন, পরিচয়ে বলা উচিত, 'আমি সাহাবাদের বুঝে কিতাব ও সুন্নাহর অনুসারী।

জী! কিন্তু পরিচয়টা কি লম্বা হয়ে যায় না? উক্ত কথাটিকে যদি একটি শব্দে বলতে চাই, তাহলে কী বলা বলা যাবে? এক কথায় সালাফী বললে কি দীর্ঘ কথাটি সংক্ষিপ্ত হয় না?

বলবেন, তাতে মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বলব, না, মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতা তো সৃষ্টি হয়েই আছে। বলবেন, আপনাদের সে নামকরণের দলীল কী? বলব, দলীল অনেক দেখেছেন। অনেক পড়েছেন। আর এ নাম নিলে কেউ মুসলিম নাম থেকে বের হয়ে যায় না। যেমন এ ছাড়া। অন্য নাম নিলেও মুসলিম ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না।

কেউ যদি নিজেকে ‘মিসরী’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ থেকে বের হয়ে যায়?

কেউ যদি নিজেকে মুহাজির’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ থেকে বের হয়ে যায়?

কেউ যদি নিজেকে ‘আনসারী’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মসলিম’ থেকে বের হয়ে যায়?

কেউ যদি নিজেকে ‘আহলে কুরআন’ বলে, সে কি আল্লাহর দেওয়া নাম মুসলিম থেকে বের হয়ে যায়?

তাহলে কেউ যদি নিজেকে সালাফী’ বা ‘আহলে হাদীস বলে, সে আল্লাহর দেওয়া নাম ‘মুসলিম’ থেকে বের হয়ে যাবে কেন? আমি একজন ভারতীয়। এ পরিচয় ভারতের বাইরে দিতে হয়। ভারতের ভিতরে অন্য রাজ্যে ‘বাঙ্গালী’ বলে পরিচয় দিই। তাতে কি আমি ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বের হয়ে যাব?

রাজ্যের ভিতরে অন্য জেলায় বর্ধমানী’ বলে পরিচয় দিই। তাতে কি আমি ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বের হয়ে যাব? জেলার ভিতরে অন্য শহর বা গ্রামে থানার বা গ্রামের নামের সাথে সম্পর্ক জুড়ে পরিচয় দিই। তাতে কি আমি ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বের হয়ে যাব?

অনুরূপই আমি মুসলিম। কিন্তু মুসলিমরা যখন শীআহ (শিয়া) হয়ে গেল, তখন আমি আহলে সুন্নাহ। তখনও আমি মুসলিম থাকলাম। বরং আসল মুসলিম থাকলাম।

মুসলিমরা যখন খারেজী (খাওয়ারিজ) হয়ে গেল এবং আরো অনেক খেয়ালখুশির পূজারী ও বিদআতী দলে বিভক্ত হল, তখন আমি আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ। তার মানে আমি খেয়াল-খুশির পূজারী বা বিদআতী নই, আহলে সুন্নাহ। এবং খারেজী নই, আহলে জামাআহ, তখনও আমি মুসলিম থাকলাম বরং আসল মুসলিম থাকলাম।

আবার আহলে সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ যখন সহীহ হাদীস ও আষারের ফায়সালা ব্যতিরেকে রায় ও ফিকহের ফায়সালা গ্রহণ শুরু করল, তখন আমি আহলে হাদীস বা আহলে আষার হলাম। তখনও আমি মুসলিম থাকলাম। বরং আসল মুসলিম থাকলাম। অনেকে বলেন, 'তোমরা নিজেদেরকে আহলে হাদীস কেন বল? আমরা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে ‘মুহাম্মাদী’ বা মহামেডান’ বলি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্য থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার জন্য। কিন্তু মহামেডানদের মধ্যে অনেক বিদআতীও আছে। তাই বিদআতী সম্প্রদায় থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার জন্য বলে থাকি, ‘আহলে সুন্নাহ।

আর মহানবী (সা.)-এর ‘সুন্নাহ’ জানা যায় তাঁর হাদীস থেকে, তার সুন্নাহ গ্রহণ করে সহীহ হাদীস থেকে। তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে ‘আহলে হাদীস বলে।

আহলে হাদীস রায় ও কিয়াসের উপর সহীহ হাদীস’কে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

কোন ব্যক্তি বিশেষের অন্ধানুকরণ না করে তার কথার উপর সহীহ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

হাদীসের কোন কথা আপাতদৃষ্টিতে জ্ঞানের বাইরে মনে হলেও জ্ঞানের উপর সহীহ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

মতবিরোধপূর্ণ ফিক্বহী মাসায়েলে ফুকাহাদের মতামতের উপরে মুহাদ্দিসীনদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়, তাই আহলে হাদীস নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে।

অনেকে বলে থাকেন, হাদীসে নবী (সা.)-এর সুন্নত অবলম্বন করতে বলা হয়েছে, হাদীস নয়। অতএব ‘আহলে সুন্নত না বলে আহলে হাদীস’ বলা সঠিক নয়।

আল্লাহর রসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা আমার সুন্নতকে মজবুত করে ধর।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)

“যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।” (বুখারী-মুসলিম)

“আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা অবলম্বন করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। তা হল আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নত।” (হাকেম, সহীহ তারগীব ৩৬নং)

মহানবী (সা.)-এর বাণীকে হাদীস বলা হয়।

এ বাণী আবার দুই প্রকারঃ যে বাণী আল্লাহর অহী-ভিত্তিক, তার উপর আমল করা ওয়াজেব। আর যা অহী-ভিত্তিক নয় (সাংসারিক), তা মান্য করা জরুরী নয়।

তার কর্ম ও মৌন-সম্মতিকেও হাদীস বলা হয়। কিছু কিছু হাদীস আছে, যা উম্মতের জন্য পালন করা বৈধ নয়। সে আমলের হাদীস কেবল মহানবী ঐs-ই করে গেছেন। যেমন একই সাথে নয়টি স্ত্রী রাখার হাদীস। তা কোন উম্মতী করতে পারে না, তা হাদীসে থাকলেও উম্মতীর জন্য পালনীয় সুন্নত নয়। এই জন্য ‘হাদীস’ কথাটি আম। আর ‘সুন্নাহ’ কথাটি খাস। আর সুন্নাহর বিশেষ অর্থ হল তরীকা বা আদর্শ। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, 'তোমরা আমার সুন্নাহ, সুন্নত, তরীকা বা আদর্শকে শক্তভাবে ধারণ কর।” “হাদীসকে ধারণ কর’ বলা হয়নি। যেহেতু তা বলা হলে সকল হাদীসের উপর আমল করা ওয়াজেব হয়ে যেত। আর তা সম্ভব ছিল না।

পক্ষান্তরে তার সুন্নত ও আদর্শ জানার মাধ্যম হল হাদীস। আর হাদীসই বলতে পারে, তার কোন বাণী ও কর্ম আমাদের জন্য সুন্নত বা আদর্শ। হাদীসই হল কুরআনের ব্যাখ্যা। তাই আহলে হাদীস’ বলা ভুল নয়। কোন সমস্যার সমাধানের সময় মযহাবী উলামাগণ নিজ নিজ ফিকাহ-গ্রন্থ থেকে সমাধান খোজেন, কিন্তু আহলে হাদীস উলামাগণ। সহীহ হাদীস থেকে তার সমাধান খোঁজেন। তাই আহলে ফিক্বহের মোকাবেলায় আহলে হাদীস’ নাম ভুল নয়। মযহাবীগণ নিজেদের ফিকহের মযহাব ও সমাধানকে বহাল রাখতে তার দলীল পেশ করেন হাদীস থেকে। সেটা যয়ীফ বা জাল হলেও মযহাব ও সমাধান পরিবর্তন করতে পারেন না। কিন্তু আহলে হাদীস কোন হাদীস যয়ীফ বা জাল হলে সমাধান পরিবর্তন করে এবং কেবল সহীহ হাদীসের উপর আমল করে। সকল আয়েম্মার নীতি ছিল অনুরূপ। তাই আহলে মযহাবের মোকাবেলায় আহলে হাদীস’ নাম। ভুল নয়। আহলে হাদীস মানে তারা কুরআন মানে না, তা নয়। কারণ হাদীসেই কুরআন মানতে বলা হয়েছে। আর কুরআনের বাণীও এক অর্থে হাদীস। সুতরাং যে হাদীস মানবে, সে কুরআন অবশ্যই মানবে। কুরআন ও সহীহ হাদীস মানতে গিয়ে আহলে হাদীস’ বলে পরিচয় দেওয়া ভুল নয়।

আহলে হাদীস এ কথা জানে যে, ফিক্বহের অধিকাংশ মাসায়েলে দলীল আছে। কিন্তু সে দলীল যয়ীফ হলে এবং তার মোকাবেলায় সহীহ হাদীস থাকলে, আহলে হাদীস সহীহ হাদীস গ্রহণ করে। দলীলে কোন সাহাবার উক্তি বা আমল থাকলে এবং তার মোকাবেলায় রসূল। ই-এর সরাসরি কোন উক্তি বা কর্ম থাকলে, আহলে হাদীস সাহাবার আষারের মোকাবেলায় রসূল ৫-এর হাদীসকে প্রাধান্য দেয়। এই হিসাবেও ‘আহলে হাদীস’ নাম ভুল নয়।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকাজ করে এবং বলে, 'আমি তো আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) তার অপেক্ষা কথায় উত্তম আর কোন ব্যক্তি? (হা-মীম সাজদাহঃ ৩৩)।

إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبَّ هَٰذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِي حَرَّمَهَا وَلَهُ كُلُّ شَيْءٍ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

অর্থাৎ, আমি তো এ নগরীর প্রতিপালকের উপাসনা করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে সম্মানিত করেছেন। সমস্ত কিছু তারই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)দের একজন হই। (নামলঃ ৯১)।

وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ ۚ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ

অর্থাৎ, সংগ্রাম কর আল্লাহর পথে যেভাবে সংগ্রাম করা উচিত; তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন কঠিনতা আরোপ করেননি; এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ); তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম এবং এই গ্রন্থেও; যাতে রসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী স্বরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষী স্বরূপ হও মানব জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে অবলম্বন কর; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি! (হাজ্জঃ ৭৮)

মহানবী (সা.) বলেছেন,

وأنا آمركم بخمس الله أمرني بهن بالجماعة والسمع والطاعة والهجرة والجهاد في سبيل الله فإنه من خرج من الجماعة قيد شبر فقد خلع ربقة الاسلام من عنقه الا ان يرجع ومن ومن دعا يدعوی الجاهلية فهو من جثاء جهنم

-(-২ “আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের আদেশ করছি, যা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন। রাষ্ট্রনেতার কথা শুনবে, তার আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরত করবে এবং একই রাষ্ট্রনেতার নেতৃত্বে) জামাআতবদ্ধভাবে বসবাস করবে। যেহেতু যে ব্যক্তি বিঘত পরিমাণ জামাআত থেকে দুরে সরে যায়, সে আসলে ফিরে না আসা পর্যন্ত ইসলামের রশিকে নিজ গলা থেকে খুলে ফেলে দেয়। আর যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের ডাক ডাকে, সে আসলে জাহান্নামীদের দলভুক্ত।”

এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসূল! যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে? তিনি বললেন,

وإن صام وإن صلى وزعم أنه مسلم فادعوا المسلمين بأسمائهم بما سماهم الله عز وجل المسلمين الممؤمنين عباد الله عز وجل

“যদিও সে নামায পড়ে ও রোযা রাখে। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা আল্লাহর (নামে) ডাকে ডাকো, যিনি তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিম, মু’মিন।” (আহমাদ ১৭ ১৭০, তিরমিযী ২৮৬৩, ত্বাবারানী ৩৩৫০, আবু য়্যা’লা ১৫৭১, ইবনে হিব্বান ৬২৩৩নং) কিন্তু তিনি এ কথাও বলেছেন,

من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا فعليكم بسنی وستة الخلفاء الراشدين المهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ وإياكم ومحدثات الأمور فإن كل محدثة بدعة وكل بدعة ضلالة

---তোমাদের মধ্যে যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার সুন্নাহ (পথ ও আদর্শ) এবং আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, দাতে কামড়ে ধরো। আর দ্বীনে। নবরচিত কর্ম থেকে সাবধান থেকো। কারণ প্রত্যেক নবরচিত (দ্বীনী) কর্মই হল 'বিদআত'। আর প্রত্যেক বিদআতই হল ভ্রষ্টতা।” (আহমাদ ১৭ ১৪৪, আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিযী ২৮ ১৫ নং, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১৬৫নং)

افترقت اليهود على إحدى وسبعين فرقة وافترقت النصارى على اثنتين وسبعين فرقة وستفترق أمتي على ثلاث وسبعين فرقة كلها في النار إلا واحدة قالوا من هي يا رسول الله؟ قال الجماعة وفى رواية ما أنا عليه واصحابى

“ইয়াহুদী একাত্তর দলে এবং খ্রিষ্টান বাহাত্তর দলে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে। আর এই উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। যার মধ্যে একটি ছাড়া বাকী সব ক’টি জাহান্নামে যাবে।” অতঃপর ঐ একটি দল প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বললেন, “তারা হল জামাআত।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “আমি ও আমার সাহাবা যে মতাদর্শের উপর আছি তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” (সুনান আরবাআহ মিশকাত ১৭১১৭২, সিলসিলাহ সহীহাহ ২০৩, ১৪৯২নং)

تفترق أمتي على بضع وسبعين فرقة أعظمها فتنة على أمتي قوم يقيسون الأمور برأيهم فيحلون الحرام ويحرمون الحلال

“আমার উম্মত সত্তরাধিক (তিয়াত্তর) ফিকায় বিভক্ত হবে। এদের মধ্যে আমার উম্মতের জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা (ও ক্ষতির কারণ হবে একটি এমন সম্প্রদায়, যারা নিজ রায় দ্বারা সকল ব্যাপারকে ‘কিয়াস’ (অনুমান) করবে; আর এর ফলে তারা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করবে।” (আল-ইবানাহ ইবনে বাত্ত্বাহ ১/৩৭৪ হাকেম ৪/৪৩০, মাজমাউয যাওয়াইদ ১১৭৯)

আর সে ভবিষ্যদ্বাণী সত্যরূপে প্রকাশও পেয়েছে। পরবর্তী যুগে ‘মুসলিম নাম নিয়ে জাতির মধ্যে অনেক অমুসলিম’ বা ‘নামধারী মুসলিম’-দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কেবল মুসলিম’ বললে নকল ও ভেজালমার্কা মুসলিমদের মধ্য থেকে প্রকৃত মুসলিমকে পার্থক্য করা যেত না। পরবর্তীতে ফির্কাবন্দির জালে ইসলাম বন্দী হয়ে পড়লে মূল। ইসলামের অনুসারীদেরকে (শিয়া প্রভৃতি) আহলে বিদআর মোকাবেলায় আহলে সুন্নাহ’ নাম নিতে হয়েছে এবং ইসলামী রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী খাওয়ারিজদের মোকাবেলায় আহলে সুন্নাহ অল-জামাআহ’ বলে পরিচয় দিতে হয়েছে। তেমনি পরবর্তীতে হাদীসের উপর ব্যক্তির আক্কেল, রায়, কিয়াস, যুক্তি, জাল ও যয়ীফ হাদীস প্রাধান্য পাওয়ার যুগে সহীহ হাদীসের উপর আমলকারীদেরকে ‘আহলে হাদীস’ নাম নিতে হয়েছে।

অবশ্যই সালাফী বা আহলে হাদীস মানে প্রকৃত সালাফী ও আহলে হাদীস। যার আকীদা, আমল, কথা, দাওয়াত, চরিত্র, ব্যবহার ইত্যাদি জীবনের সকল ক্ষেত্রে সালাফী বা আহলে হাদীস। সকল ক্ষেত্রে সে কুরআন ও হাদীসকে সলফে সালেহীনের বুঝ অনুসারে বুঝে তাদের মতো সাধ্যমতো আমল করে।

সালাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ

সীন-লাম-ফা একটি ধাতু, যা আগে যাওয়া বা অগ্রণী হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে।[১] তাই এই সালাফ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলঃ যে আগে গেছে বা অগ্রণী হয়েছে। এটি ‘সালেফ’ শব্দের বহুবচন। আর তার বহুবচন হয় আসলাফ, সুলুফ ও সুল্লাফ।

আত্মীয় বা অন্য কিছুর আপনার প্রত্যেক পূর্ববর্তী ও অগ্রণীর জন্য উক্ত শব্দ ব্যবহার করা হয়। এ থেকেই মহান আল্লাহর বাণী,

فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَمَثَلًا لِّلْآخِرِينَ

“পরবর্তীদের জন্য আমি ওদেরকে অতীত নমুনা ও দৃষ্টান্ত করে রাখলাম।” (যুখরুফ : ৫৬)।

ইমাম বাগবী (রাহিমাহুল্লাহ) তার তফসীর গ্রন্থে (৭/২ ১৮তে) উক্ত আয়াতের তফসীরে বলেছেন, “সালাফ হল বিগত বাপ-দাদাগণ। সুতরাং আমি তাদেরকে পূর্ববর্তী বা অতীত করলাম, যাতে পরবর্তীগণ তাদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। এই (গত হওয়ার) অর্থেই মহান আল্লাহর বাণী,

وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا

“(হারাম করা হয়েছে) দুই ভগিনীকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা গত হয়ে গেছে, তা (ধর্তব্য নয়)। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (নিসাঃ ২৩)

অর্থাৎ, তোমাদের যে কর্ম গত হয়ে গেছে, তা ধর্তব্য নয়। বলা বাহুল্য, ব্যতিক্রান্ত হল পাপটা, কর্মের বৈধতা নয়। বলা হয়, অমুকের সম্মানীয় সলফ আছে। অর্থাৎ, অগ্রবর্তী বাপদাদা আছে।[২]

অবশ্য হাফেয ইবনুল আষীর ও আল্লামা ইবনে মনযূর (সালাফের অর্থে) বয়স ও মর্যাদায় অগ্রবর্তী বা অগ্রণী হওয়ার ব্যাপারকে নির্দিষ্ট করেছেন।

ইবনে মনযূর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, অনুরূপ সলফ হল, বাপদাদা ও আত্মীয়দের মধ্য থেকে যারা বয়স ও মর্যাদায় আপনার উর্ধে, যারা আপনার অগ্রবর্তী হয়েছে (বা আপনার আগে গুজরে গেছে)। এই কারণে তাবেঈনদের পুরোভাগের প্রাথমিক দলকে ‘সলফে সালেহ’ বলে নামকরণ করা হয়েছে।[৩]

এই অর্থের প্রতি নির্দেশ করে বুখারী-মুসলিমের একটি হাদীস, যাতে একটি কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা কন্যা ফাতেমাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এলে নবী (সা.) তাকে দেখে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, 'আমার কন্যার শুভাগমন হোক। অতঃপর তিনি তাকে নিজের ডান অথবা বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তাকে কানে কানে গোপনে কিছু বললেন। ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) জোরেশোরে কাঁদতে আরম্ভ করল। সুতরাং তিনি তার অস্থিরতা দেখে পুনর্বার তাকে কানে কানে কিছু বললেন। ফলে (এবার) সে হাসতে লাগল। (আয়েশা বলেন,) অতঃপর আমি ফাতেমাকে বললাম, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীদের মাঝে (তাদেরকে বাদ দিয়ে) তোমাকে গোপনে কিছু বলার জন্য বেছে নেওয়া সত্ত্বেও তুমি কাঁদছ?’ তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন উঠে গেলেন, তখন আমি তাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সা.) তোমাকে কী বললেন? সে বলল, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গোপন কথা প্রকাশ করব না।

অতঃপর রাসুলল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল করলে আমি ফাতেমাকে বললাম, তোমার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে। তাই আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি যে, তুমি আমাকে বল, রাসূলুল্লাহ (সা.) তোমাকে কী বলেছিলেন? সে বলল, 'এখন বলতে কোন অসুবিধা নেই। আল্লাহর রসূল (সা.) প্রথমবারে কানাকানি করার সময় আমাকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, জিবরীল (আঃ) প্রত্যেক বছর একবার করে কুরআন শোনান। কিন্তু এখন তিনি দু’বার শুনালেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটে। সুতরাং তুমি (হে ফাতেমা!) আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। (فإن نعم السلف أنا لك) কেননা, আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগামী।” সুতরাং আমি (এ কথা শুনে) কেঁদে ফেললাম, যা তুমি দেখলে। অতঃপর তিনি আমার অস্থিরতা দেখে দ্বিতীয়বার কানে কানে বললেন, “হে ফাতেমা! তুমি কি এটা পছন্দ কর না যে, মুমিনদের নারীদের তুমি সর্দার হবে অথবা এই উম্মতের নারীদের সর্দার হবে?” সুতরাং (এমন সুসংবাদ শুনে) আমি হাসলাম, যা তুমি দেখলে।” (বুখারী ৬২৮৫, শব্দাবলী মুসলিমের ৬৪৬৭নং)

হাফেয নাওয়াবী (রাহিমাহুল্লাহ) সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থে (১৬/৭) নবী (সা.)-এর উক্তি (فإن نعم السلف أنا لك) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, 'সালাফঃ অগ্রগামী। এর অর্থ হল আমি তোমার পূর্বে গমনকারী, তুমি পরে আমার কাছে আগমন করবে।”

এ হল সলফ’ এর আভিধানিক অর্থ।

[১]. মু'জামু মাক্কায়িসিল লুগাহ, ইবনে ফারেস ৩/৯৫

[২]. রাগেব আসফাহানী, মুফরাদাত ৪২০পৃঃ

[৩]. লিসানুল আরাব ৯/ ১৫৯, ইবনুল আমীরের বক্তব্য পরিভাষায় সালাফ’ কারা?





পূর্বে উক্ত হয়েছে, সলফের অর্থ হল, সেই ব্যক্তি, যে বয়স ও মর্যাদায় আপনার অগ্রগামী হয়েছে। এক্ষণে আমরা এই শব্দের পারিভাষিক অর্থ পেশ করব। মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন,

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

“আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য এমন। উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত; যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, এ হল বিরাট সফলতা।” (তাওবাহঃ ১০০)।

সহীহায়নে)[১] ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ

“সর্বোত্তম যুগ হল আমার (সাহাবীদের) শতাব্দী। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) শতাব্দী। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেতাবেয়ীনদের) শতাব্দী। অতঃপর এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যাদের একজনের কসমের আগে সাক্ষি হবে, আবার সাক্ষির আগে কসম হবে।” (শব্দাবলী বুখারীর)

সহীহ মুসলিম (২৫৩৬নং)এ আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, কোন লোকেরা সর্বশ্রেষ্ঠ? উত্তরে তিনি বললেন, “আমি যে শতাব্দীতে আছি (তার লোকেরা)। অতঃপর দ্বিতীয়, অতঃপর তৃতীয়।”

এ বিষয়ে একাধিক হাদীস রয়েছে। বলা বাহুল্য, সূরা তাওবার উল্লিখিত আয়াত এবং উপর্যুক্ত হাদীস সাহাবাগণের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পর তারাই ছিলেন উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। আর এ কথায় কোন সন্দেহ ও সংশয় নেই যে, তারাই হলেন মর্যাদা, ইলম ও ঈমানে আমাদের অগ্রগামী ‘সলফ।

* কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

আর তা হল এই যে, ইবনে মাসউদ, আয়েশা ও অন্যান্যের হাদীসে যে সময়কালের নির্দিষ্টীকরণ এসেছে, তা কি সলফের পারিভাষিক অর্থ নির্ধারণে যথেষ্ট? অন্য কথায়, প্রত্যেক সেই ব্যক্তি, যিনি উক্ত বকতময় সময়কালে জীবনধারণ করেছেন, তিনিই কি অনুসরণীয় সলফে সালেহ গণ্য হবেন?

* উত্তরঃ

মোটেই না। যেহেতু সময়ের অগ্রগামিতা সলফ নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। সুতরাং এর সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ আবশ্যক। আর তা হল এই যে, তার (আকীদাহ ও আমল) কিতাব, সুন্নাহ ও সাহাবাগণের বুঝ অনুযায়ী হবে।

বলা বাহুল্য, আমরা দেখতে পাই, সুন্নাহর ইমামগণ উক্ত পরিভাষায় শর্তারোপ করে বলেন, সলফে সালেহ। এর মাধ্যমে সলফে ত্বালেহ (মন্দ) মানুষ বের হয়ে যায়, যারা সমসাময়িককালে জীবনধারণ করেছে, কিন্তু সাহাবাগণের বুঝ, কর্মপদ্ধতি ও মতাদর্শের অনুসারী ছিল না।

কথায় আছে, বাস্তব উত্তম সাক্ষী। কাদারিয়্যাহ ফির্কা সাহাবাগণের একটি জামাআত থাকাকালে প্রকাশ লাভ করেছে। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) এর হাদীস ও তার উক্ত ফির্কা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা সুপ্রসিদ্ধ। আর তা সহীহ মুসলিমের (ভূমিকার পর) প্রথম হাদীস।

তদনুরূপ বিদ্রোহী খাওয়ারিজ ফির্কা আলী ও অন্যান্য সাহাবাগণ (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাচরণ করেছে। উক্ত ফির্কা আবির্ভূত হয়েছিল সাহাবাগণের সামনে। যাদের সাথে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) প্রসিদ্ধ মুনাযারা (তকালোচনা) করেছিলেন, যা হাকেম তার মুস্তাদরাক গ্রন্থে এবং অন্যান্যগণ[২] সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। খাওয়ারিজরা যে ভ্রষ্টতায় ছিল, তার প্রমাণ দিয়ে ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাদেরকে বলেছিলেন, “তোমরা লক্ষ্য কর, তোমাদের দলে তাঁদের। (অর্থাৎ সাহাবাদের) কোন একজনও নেই। আর সেটাই ছিল তাদের ভ্রষ্টতা বর্ণনার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ।

বুঝা গেল, সময়ের অগ্রগামিতা কোন মানুষের ‘সলফে সালেহ’ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।

ইমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থের ভূমিকায় (১/১৬)তে আলী বিন শাক্বীক (রাহিমাহুল্লাহ) কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন মুবারককে লোকেদের সামনে বলতে শুনেছি, আমর বিন সাবেতের হাদীস বর্জন কর। কারণ সে সলফকে গালি দিত।

আমি বলি, এখানে ‘সলফ’ বলতে উদ্দেশ্য কেবল সাহাবাগণ, অন্য কেউ নন।

পরিভাষায় সালাফিয়াহর অর্থ একাধিক উলামা বর্ণনা করেছেন। যেমন আহলুস সুন্নাহর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহু ওয়া রায্বিয়া আনহু) তার প্রসিদ্ধ পুস্তিকা উসূলুস সুন্নাহ’তে বলেছেন, ‘আমাদের নিকট সুন্নাহর মৌলিক নীতি হল, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবাগণ যে বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তা সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং তাদের অনুগমন করা।

আল্লামাহ সাফারীনী (রাহিমাহুল্লাহ) লাওয়ামিউল আনওয়ার’ (১/২০)এ বলেছেন, 'সলফদের মযহাব বলতে উদ্দেশ্য হল, যে আদর্শের উপর সাহাবায়ে কিরাম , নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসারী প্রধান প্রধান তাবেঈনগণ, তাদের অনুসারী তাবে তাবেঈনগণ, দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষি দেওয়া হয়েছে, দ্বীনে তাদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে সলফ থেকে খলকগণের বর্ণনা-সূত্রে মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছে।

তারা নয়, যাদেরকে বিদআতী আখ্যায়িত করা হয়েছে অথবা যারা অসন্তোষজনক খেতাব নিয়ে প্রসিদ্ধ হয়েছে। যেমন খাওয়ারিজ, রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজিআহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মুতাযিলাহ, কারামিয়্যাহ প্রভৃতি।

আমাদের (উস্তায) শায়খ আল্লামা মুহাম্মাদ আমান (রাহিমাহুল্লাহু ওয়া গাফারা লাহ) তার বিশাল গ্রন্থ ‘আস-স্বিফাতুল ইলাহিয়্যাহ ফী স্বাওইল কিতাবি অস্-সুন্নাহ’ (৫৭পৃঃ)তে বলেছেন, 'যখন সালাফ শব্দ বলা হয়, তখন পরিভাষায় আমাদের উদ্দেশ্য হয়, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবাগণ, যারা তার যুগে উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁর নিকট থেকে এই দ্বীনকে তার মুখ্য ও গৌণ সকল বিষয়ে তরতাজা রূপে সরাসরি গ্রহণ করেছেন। যেমন এই পরিভাষায় প্রবিষ্ট হবেন তাবেঈনগণ, যারা দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই তাদের ইলমের উত্তরসূরি হয়েছেন। যারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাক্ষ্য ও প্রশংসার অন্তর্ভুক্ত, যাতে তিনি তাদেরকে শ্রেষ্ঠ মানব’ বলে অভিহিত করেছেন। (এরপর লেখক উপযুক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।) যেমন পরিভাষায় শামিল তাবে তাবেঈনগণও।

‘সালাফ’ একটি পারিভাষাগত শব্দ। আর এই পরিভাষা তখন প্রকাশ ও প্রসিদ্ধি লাভ করল, যখন দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহে কালামিয়্যাহ ফির্কাগুলির মাঝে মতভেদ ও কলহ প্রকাশ ও চলমান হল এবং সকলেই সালাফের প্রতি সম্পর্ক জোড়ার প্রচেষ্টা চালাতে লাগল। (সবাই নিজেকে সালাফী বলে দাবী করতে লাগল।) প্রচার করতে লাগল যে, যে মতাদর্শে সে বিশ্বাসী আছে, সেটাই হল সেই মতাদর্শ, যার উপর সাহাবাগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

সুতরাং এই পরিস্থিতিতে এমন কিছু মৌলনীতি, মূলসূত্র বা নিয়মকায়েদা প্রকাশ পাওয়া প্রয়োজন, যার চিহ্ন হবে সুস্পষ্ট এবং সালাফী অভিমুখে সুদৃঢ়। যাতে যে সকল ব্যক্তি তাদের অনুগমন করতে চায় এবং তাদের পদ্ধতি অনুসারে পথ চলতে চায়, তাদের নিকট বিষয়টি তালগোল পেকে না যায়।

অন্যস্থলে তিনি বলেছেন, বিগত আলোচনায় স্পষ্ট হল যে, সালাফিয়াহর ব্যবহারিক অর্থ একটি পরিভাষায় পরিণত হয়েছে, যা সেই তরীকাকে বলা হয়, যা ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের অগ্রণী দল (সাহাবা)দের এবং তাঁদের, যারা ইলম অর্জনে, তার বোঝার ক্ষেত্রে, তার প্রতি দাওয়াতী প্রকৃতির ক্ষেত্রে তাদের অনুগমন করেন। সুতরাং তার অর্থ কোন নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক যুগের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটা বোঝা আবশ্যক যে, তা হল মানব-জীবন চলা-অবধি চলমান অর্থ। আর এটাও বোঝা আবশ্যক যে, ফিকাহ নাজিয়াহ’ (পরকালে পরিত্রাণ লাভকারী দল) কেবল হাদীস ও সুন্নাহ উলামাদের মাঝে সীমাবদ্ধ এবং তারাই হলেন এই মানহাজ (মতাদর্শ)এর অধিকারী। যে ফিকাহ কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে, যা নবী -এর হাদীস থেকে উপলব্ধি করা যায়। তিনি বলেছেন,

ولا تزال طائفة من أمتي منصورين على الحق لا يضرهم من خذلهم حتى يأتي أمر الله

“আমার উম্মতের মধ্যে এক দল চিরকাল হক (সত্যের উপর সাহায্যপ্রাপ্ত (বিজয়ী) থাকবে, আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্বমুহূর্ত) আসা পর্যন্ত, যারা তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।”

আমি (লেখক) বলি, (শায়খ রাহিমাহুল্লাহ) যে হাদীস উল্লেখ করেছেন, তা বুখারী-মুসলিমে মুআবিয়া (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত।

বলা বাহুল্য, বিগত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, সালাফের পারিভাষিক অর্থ হল, সাহাবা ও তাবেঈনগণ এবং তারাও, যারা কিয়ামত পর্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুগমন করবেন, তাঁদের তরীকায় চলমান থাকবেন এবং তাদের পদাঙ্কানুসরণ করবেন।

[১]. বুখারী ২৯৫২, মুসলিম ২৫৩৩নং

[২]. মুস্তাদরাক ২/ ১৫০, আহমাদ ৬৫৬নং, বাইহাক্বীর কুবরা ৮/ ১৭ ৯, আহমাদের ইসনাদকে ইমাম ইবনে কাষীর ‘আল-বিদায়াহ অন-নিহায়াহ’ গ্রন্থে ‘সহীহ’ বলেছেন। দ্রঃ ইরওয়া ২৪৫৯নং দেখুনঃ আন-নিহায়াহ
সালাফী বা আহলে হাদীসদের বিরুদ্ধে কতিপয় অভিযোগ ও ভুল ধারণা এবং তার নিরসন

১। সালাফীরা শাফেয়ী বা শাফেয়ীদের মতো।

আসলে অনেক মাসআলায় শাফেয়ীদের সাথে সালাফীদের মিল দেখে কোন কোন অর্বাচীন এমন কথা বলে থাকে।

২। সালাফীরা মযহাব মানে না। ইমাম মানে না।

হ্যাঁ, সালাফীরা বানাওয়াট মযহাব মানে না। কারণ প্রসিদ্ধ মযহাবের চার ইমাম কখনোই বলে যাননি যে, তোমরা আমাদের অন্ধানুকরণ কর। বরং তারা বলে গেছেন, কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করতে। আর কুরআন-হাদীসে মযহাব মানার কথা বলা হয়নি।

সালাফীরাই সকল ইমামকে মান্য করে থাকেন। যেহেতু সকল ইমাম সালাফীই ছিলেন। তাঁদের কোন নির্দিষ্ট মযহাব ছিল না। পরন্তু সবাই বলে গেছেন, হাদীস সহীহ হলে, সেটাই আমার মযহাব। সুতরাং তাদের এই নির্দেশ মান্য করে সালাফীরাই ১০০% হানাফী, ১০০% মালেকী, ১০০% শাফেয়ী এবং ১০০% হাম্বলী।

৩। সালাফীরা দরূদ পড়ে না।

হ্যাঁ, তারা কোন নকল দরূদ পড়ে না এবং কোন বানাওয়াটি পদ্ধতিতে দরূদ পড়ে না। যেহেতু তা বিদআত।

৪। সালাফীরা আওলিয়াদের সম্মান করে না।

এটা ভুল ধারণা। অবশ্য তারা তাদেরকে সিজদা করে না, প্রণাম করে না এবং মরণের পর তাদের কবরের উপর মাযার তৈরি করে না। যেহেতু এ সকল কর্ম সম্মানে বাড়াবাড়ি ও শরীয়ত-বিরোধী।

৫। সালাফীরা আহলে বায়তের সম্মান করে না, তাদেরকে ভালোবাসে না।

এটাও পূর্বানুরূপ ভুল ধারণা। তবে তারা তাদের জন্ম-মৃত্যদিন। পালন করে না। মাতম করে না, তাজিয়া করে না---এ কথা ঠিক। কারণ তা শরীয়ত-পরিপন্থী।

৬। আহলে হাদীস আয়েম্মা ও ফুক্বাহা (রাহিমাহুমুল্লাহ)দেরকে গালাগালি দেয়।

সত্যপক্ষে আহলে হাদীস যারা, তারা কোন দিনই তাদেরকে গালি দিতে পারে না। অবশ্য এ কথা অনস্বীকার্য যে, প্রত্যেক দলেই এক শ্রেণীর গোড়া মানুষ থাকে, তারাই পরস্পরকে গালাগালি করে। তাছাড়া আহলে হাদীসের আক্বীদা হল, সকল ইমামই আহলে সুন্নাহ বা হাদীস ছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুসরণকে তাঁরা ওয়াজেব জানতেন এবং সবাই এতে একমত ছিলেন। তারা এ কথাও জানতেন যে, রসূলের কথা ছাড়া বাকী অন্য কোন সাহাবী, তাবেয়ী ইমাম বা আলেমের কথা মান্যও হতে পারে এবং অমান্যও। কিন্তু তাঁরা মাসুম ছিলেন না, মুজতাহিদ ছিলেন। তাদের কোন ফায়সালা ভুল হলে একটি এবং ঠিক হলে দু’টি নেকীর তারা হকদার হন। সুতরাং যারা নেকীর হকদার, তাদেরকে গালি দেওয়ার কোন প্রসঙ্গই আসে না।

তাছাড়া মহানবী কি বলেছেন, “মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী (আল্লাহর অবাধ্যাচরণ) এবং তার সাথে লড়াই ঝগড়া করা কুফরী।” (বুখারী ৪৮, মুসলিম ২৩০নং)

৭। আহলে হাদীসদের অনেক মাসায়েল কুরআন-হাদীস বিরোধী।

আসলে আহলে হাদীসদের মাসায়েল কুরআন-হাদীস বিরোধী নয়, বরং মযহাবীদের মযহাব বিরোধী অথবা যয়ীফ বা জাল হাদীসবিরোধী। অথবা পরস্পরবিরোধী দুই হাদীসের অপ্রাধান্যপ্রাপ্ত হাদীস বিরোধী। যারা সহীহ হাদীস মেনে চলার শতভাগ চেষ্টা করে, তারা কি কুরআন-হাদীসের বিরোধী সমাধান দিতে পারে?

৮। আহলে হাদীস বুখারীর মুক্বাল্লিদ, আলবানীর মুকাল্লিদ.... ।

আসলে তাকলীদের মৌলিক অর্থ এবং অন্ধ অনুকরণ ও ইত্তিবা বা অনুসরণের অর্থ না বুঝে অনেকে এই শ্রেণীর মন্তব্য করে থাকে। বলা। বাহুল্য, গায়র মুকাল্লিদ নির্দিষ্ট কারো মুকাল্লিদ নয়। গায়র মক্কাল্লিদ কুরআন-হাদীস বুঝতে ও মানতে নির্দিষ্ট কারো তাকলীদ করে না। বরং আহলে হাদীস সে ব্যাপারে সাহাবা, তাবেঈন, আয়িম্মা ও ফুক্বাহার অনুসরণ করে। অতঃপর যেটি সহীহ দলীলের অধিক নিকটবর্তী পায়, তার অনুসরণ করে। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَىٰ ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ * الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ

অর্থাৎ, যারা তাগুতের পূজা হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অনুরাগী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার দাসদেরকে---যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা উত্তম তার অনুসরণ করে। ওই তারা, যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং ওরাই বুদ্ধিমান। (যুমারঃ ১৭-১৮)

আহলে হাদীস যে ইমাম বুখারীর মুক্বাল্লিদ নয়, সে কথা স্বীকার করে খোদ মযহাবীরাই উদাহরণ দিয়ে থাকেন।

অনেকে এ কথাও উল্লেখ করে থাকেন যে, আহলে হাদীস আল্লামা আলবানীর অন্ধানুকরণ করে না। যেহেতু বহু মাসায়েলে তারা তার ফতোয়ার বিপরীত মত অনুসরণ করে থাকে।

৯। 'আসহাবুল হাদীস’ মানে কেবল মুহাদ্দিসীনকে বুঝানো হয়। তথাকথিত আহলে হাদীসকে নয়।

অর্থাৎ, যাদের কাছে হাদীসের ইলম আছে কেবল তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত দল, কেবল তারাই ফিকাহ নাজিয়াহ। আশা করি, জ্ঞানিগণ মানবেন যে, যারা তাদের অনুসরণ করে সহীহ হাদীস ভিত্তিক আমল করে, তারাও তাদেরই দলভুক্ত। আম জনসাধারণ মুহাদ্দিসীন না হলেও তারা তাদের আদর্শ অনুসারে চলে। তাই তারাও ‘আহলে হাদীস’। যেমন আহলে কিতাব (ইয়াহুদী-খ্রিস্টান) বলতে তাদের উলামা ও আম জনসাধারণ উভয় শ্রেণীর মানুষকে বুঝানো হয়।

১০। সালাফীরা ইজমা মানে না।

ভুল ধারণা। ইজমা সঠিক হলে অবশ্যই মানে। আর সঠিক ইজমা কুরআন ও সহীহ হাদীস-বিরোধী হয় না। কোন ভুলের উপর উম্মাহর ইজমা হতে পারে না। আর কোন বিষয়ে সঠিক ইজমা ও সর্ববাদিসম্মতি হওয়া বিশাল কঠিন ব্যাপার।

১১। আহলে হাদীস কিয়াস মানে না।

যে সমস্যার সমাধানে কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট উক্তি নেই, অনেক অনভিজ্ঞ ব্যক্তি উক্ত কথা বলে, সে সমস্যার কথা উল্লেখ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হাদীস পেশ করতে বলে। অথচ অভিজ্ঞ মযহাবীরাও জানেন যে, আহলে হাদীসরাও কিয়াস মানে। তবে সহীহ হাদীসের ওপর কিয়াসকে প্রাধান্য দেয় না। পানি না পাওয়া গেলে ওযুর জায়গায় তায়াম্মুম ব্যবহার করে, কিন্তু পানি সামনে এলে তায়াম্মুম বাতিল মনে করে।

১২। আহলে হাদীস নফসের ইত্তিবা করে!

এটিও একটি গায়ের ঝাল-ঝাড়া অপবাদ। আহলে হাদীস নির্দিষ্ট কোন মযহাবের তাক্বলীদ করে না বলে, তারা সুবিধাবাদী নফসের পূজারী নয়। একই বিষয়ে উলামাগণের বহুমত থাকলে সেই মতকেই তারা গ্রহণ করে, যা সহীহ দলীল ভিত্তিক এবং বলিষ্ঠ। কক্ষনোই সে মত গ্রহণ করে, যা নিজেদের মনঃপুত ও যাতে নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধা রক্ষা হয়। কার মত গ্রহণ করা হবে, তা নিয়েও তারা নিজেদের বিবেক-বিবেচনাকে কাজে লাগায়। কোন আলেম ইলম ও আমলে বড়, তা নির্বাচন করে সুস্থ। মন-মস্তিষ্কের মাপকাঠিতে। যেহেতু মহানবী (সা.) বলেন,

استفت نفسك وان افتاك المفتون

“তুমি তোমার হৃদয়ের কাছে ফতোয়া নাও, যদিও মুফতীরা তোমাকে ফতোয়া দিয়েছে।” (আহমাদ ১৮০০৬, দারেমী ২৫৩৩ বুখারীর তারীখ, সহীহুল জামে ৯৪৮, ২৮৮ ১নং)

১৩। আহলে হাদীস উলামাদের মাঝে নানা মতভেদ কেন?

এমন মতভেদ অস্বাভাবিক নয়। একটি মযহাবের ভিতরেও অনেক মতভেদ পরিদৃষ্ট হয়। জেনে রাখা ভালো যে,

১। আহলে হাদীস কোন ব্যক্তি বিশেষের অন্ধানুকরণের জামাআত নয়। কেবল কুরআন ও সহীহ হাদীস-ভিত্তিক একটি মতাদর্শের নাম, যা ইসলামের মূল স্রোতধারা ও রাজপথ।

২। তার মানে হাদীস সহীহ হলে সেটাই আহলে হাদীসের মযহাব হয়। যেমন সকল মুহাদ্দিসীন ও আয়েম্মায়ে কিরাম (রাহিমাহুমুল্লাহ)গণের মযহাব তাই ছিল। তারা সকলেই আহলে হাদীস ছিলেন।

৩। এতত্সত্ত্বেও মতভেদের কারণ কী? কারণ পরস্পর-বিরোধী বর্ণিত হাদীস।

আহলে হাদীস তাহকীক করে যে হাদীসটি সহীহ পর্যায়ের, কেবল সেই হাদীসটির উপর আমল করে এবং দুর্বল হাদীস বর্জন করে।

পরস্পর-বিরোধী উভয় হাদীস সহীহ হওয়ার ক্ষেত্রে নাসেখ-মনসুখ নির্ণয় করে। তা সম্ভব না হলে উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন। করে আমল করার চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মাসআলাই তাদের মযহাব হয়। তারা কোন নির্ধারিত ব্যক্তির অন্ধানুকরণ করে তারই মযহাবকে (সবার চেয়ে সঠিক) প্রমাণ করার মানসে যয়ীফ হাদীসকে সহীহ করার পায়তারা করে না অথবা কোন সহীহ হাদীসের অপব্যাখ্যা বা তাবীল করে না।

তাছাড়া কোন হাদীসের সহীহ-যয়ীফ নিয়ে অথবা কুরআনের হাদীসের বক্তব্য বোঝা নিয়ে মতভেদ স্বাভাবিক।

১৪। সালাফীরা রাজনীতি করে না, ইসলামে কি রাজনীতি নেই?

হ্যাঁ, সালাফীরা রাজনীতি করে, আর তাদের রাজনীতি হল রাজনীতি না করা। আর ইসলামে আছে ইসলামী রাজনীতি, পাশ্চাত্যের রাজনীতি নয়।

১৫। আহলে হাদীস বুখারী ছাড়া অন্য হাদীস মানে না।

এ মন্তব্যও কোন অর্বাচীন ব্যক্তি বিশেষের। সবচেয়ে বেশি শুদ্ধ ও সহীহ হাদীসগ্রন্থ বুখারী। তা বলে তা আহলে হাদীসের একমাত্র হাদীসগ্রন্থ নয়। বরং অন্য গ্রন্থের হাদীস সহীহ সনদে পেলে তা গ্রহণ করে এবং বুখারীতে তার বিপরীত থাকলে পরস্পর-বিরোধী হাদীসের মাঝে সমন্বয় সাধন করে আমল করে।

হাদীসটির সনদ সহীহ, নাকি যয়ীফ---তা নিয়ে মতভেদ থাকার ফলে যেমন ইসলামে বিভিন্ন মযহাব সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আহলে। হাদীস উলামাগণের মাঝেও একই মাসআলায় ভিন্ন ভিন্ন মত বর্তমান। থাকা অস্বাভাবিক নয়। যেমন একই মযহাবের ভিতরে একাধিক মত বা বিভিন্ন উপ-মহাব সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

সুতরাং মতভেদ থাকতে পারে, থাকবে। কিন্তু তা নিয়ে কলহ-দ্বন্দ্ব বা কাদা ছুঁড়াছুঁড়ি করা মোটেই উচিত নয়।

উদার মানুষ যেটাকে সবচেয়ে সঠিক বলে বিশ্বাস করবে, সেটার অনুসরণ করবে এবং কোন ব্যক্তি বিশেষের অন্ধানুকরণ করবে না। এটাই তো হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَىٰ ۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ * الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ

অর্থাৎ, যারা তাগুতের পূজা হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অনুরাগী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাগণকে---যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা উত্তম তার অনুসরণ করে। ওরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং ওরাই বুদ্ধিমান। (সুরা যুমার ১৭- ১৮ আয়াত)

وصلى الله وسلم وبارك على رسول الله وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين، والحمد لله رب العالمين

সমাপ্ত